পরকীয়ায় আইনি ব্যবস্থা: স্বামীর সুযোগ থাকলেও কিছুই করার নেই স্ত্রীর

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম

পরকীয়ায় আইনি ব্যবস্থা: স্বামীর সুযোগ থাকলেও কিছুই করার নেই স্ত্রীর

ফাইল ছবি

সামাজিক নানা বন্ধনের মধ্যে বিয়ে একটি প্রাচীণ বন্ধন। চিরবন্ধনের সেই সম্পর্ক ইদানিং কেমন যেন ঠুনকো সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। হঠাৎ করেই প্রেম হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে আবার সেই সম্পর্ক রূপ নিচ্ছে বিয়েতে। বিয়ের সেই সম্পর্ক কখনো টিকছে, কখনো ভেঙে যাচ্ছে। অহরহ ঘটছে বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনাও। তবে বিয়েবিচ্ছেদের পেছনে অনেক কারণ থাকলেও অনেকে স্বামী ও স্ত্রীর বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন। এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের মুখোমুখি হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান। 

স্ত্রী বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক (পরকীয়া) করলে স্বামী যেমন আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন, তেমনি স্ত্রীও কি স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন? এমন প্রশ্নে বিজ্ঞ এই আইনজীবী জানালেন, ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের কোনো আইন উল্লিখিত নেই। স্ত্রী পরকীয়া করলে স্বামী আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন, কিন্তু স্বামী পরকীয়া করলে বাংলাদেশের আইনে স্ত্রী কখনোই স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। 

বাংলাদেশের আইনে এ নিয়ম খুবই অসঙ্গত মন্তব্য করে ইসরাত হাসান আরও বলেন, শুধুমাত্র এক পাক্ষিকভাবে শাস্তি প্রণয়ন একেবারেই যৌক্তিক নয়। যেহেতু নারী এবং পুরুষ উভয়েই নিজেদের সম্মতিতে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলেন সেক্ষেত্রে এক পাক্ষিক আইনি ব্যবস্থা গ্ৰহণযোগ্য নয়। সে ক্ষেত্রে শাস্তি ব্যবস্থা বন্ধ হওয়াই শ্রেয়।

‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক’ যদি স্বামী বা স্ত্রীর গোচরে হয়ে থাকে তাহলে আইনিভাবে স্বীকৃত হয় কি না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট ইসরাত বলেন, স্বামীর গোচরে কোনো স্ত্রী যদি সম্পর্ক করে থাকে তা স্বীকৃত কি না আইনিভাবে তা স্পষ্ট নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে স্বামী এক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার স্বার্থে প্রলোভন দিয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করে থাকেন। তবে স্ত্রী জানলেও সেক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়ার ব্যাপারকে মেনে নিতে হচ্ছে।

৪৯৭ দণ্ডধারার এ দণ্ডবিধি অনুযায়ী স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে যার সাথে পরকীয়া করছে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার পাবেন না। কিন্তু স্বামী যদি অবিবাহিত নারীর সাথে পরকীয়াতে জড়িত হন এবং স্ত্রী যদি তা জানে তবে তা আইনত বৈধ।

৪৯৭ দণ্ডধারার আইন বদলাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে এ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান জানান, তিনি নিজেই এ বিষয়ে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেছিলেন। এই আইন সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অদ্ভুত বৈষম্যমূলক। এটা এক ধরনের অসাংবিধানিক ব্যাপার । যেখানে দুজন অপরাধ করলেও শাস্তি দেওয়ার অধিকার শুধু একজনের কেন হবে! 

এ বিষয়ে আদালত থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আইনি সংশোধনের আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তবে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছেন ইসরাত হাসান।

Link copied!