অর্থ আত্মসাতের দায়ে সোনালী লাইফের সিইওর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম

অর্থ আত্মসাতের দায়ে সোনালী লাইফের সিইওর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

সংগৃহীত ছবি

দেশের অন্যতম বীমা প্রতিষ্ঠান সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সদ্য বহিষ্কৃত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও কোম্পানির পক্ষ থেকে রাশেদ বিন আমান ও তার দুর্নীতির সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম এমরান বাদী হয়ে মীর রাশেদ বিন আমানসহ কোম্পানির সাবেক সাত কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে রামপুরা থানায় মামলা দায়ের করেন।

এই সাত আসামি হলেন- সোনালী লাইফের বহিস্কৃত সিইও মীর রাশেদ বিন আমান, সাবেক এইচআর অফিসার ফাতেমা তামান্না সুইটি, হিসাব বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সুমি সেন, সাবেক হেড অব পারচেজ রাজেশ আইচ, সাবেক হেড অব ফাইন্যান্স মো. বোরহান উদ্দিন মজুমদার, হিসাব বিভাগের সাবেক ম্যানেজার মো. শিপন ভূঁইয়া ও সাবেক হেড অব ইনভেস্টমেন্ট সুজন তালুকদার।

মীর রাশেদ বিন আমানের দুর্নীতি কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখার জন্য সোনালী লাইফের পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির ১৫০ কোটি টাকা সিইও আত্মসাৎ করেছেন এমন প্রমাণ উঠে এসেছে বলে কোম্পানি একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, সোনালী লাইফ মীর রাশেদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ বছরের প্রথম দিন থেকেই অফিসে আসা বন্ধ করে দেন মীর রাশেদ। কোম্পানির জরুরি কাগজপত্রের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের নানা চেষ্টার পর একদিন অফিসে আসেন মীর রাশেদ। সেদিন তার দপ্তরে পাওয়া যায় সই জালিয়াতি করা অসংখ্য ব্ল্যাংক চেক। ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের পর মীর রাশেদের আরও অর্থ জালিয়াতির পরিকল্পনা ছিলএমনই মনে করছে সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে শুরু থেকেই গ্রাহকদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবেন না এমন প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে আসা সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস পদত্যাগ করেছেন। কোম্পানির পক্ষ থেকে নিয়োগ করা তৃতীয় পক্ষের তদন্ত এবং রাশেদের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাহক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্ত তার কারণে প্রভাবিত হয়েছে; এমন অভিযোগ যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য তিনি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘স্বচ্ছতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সততা ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে আমি পদত্যাগ করেছি। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিরীক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি তদন্ত চলাকালীন কোনো প্রভাব বিস্তার না করে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য আমি নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ‘ম্যাবস অ্যান্ড জে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে সোনালী লাইফ। তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে মীর রাশেদের একের পর এক জালিয়াতির কথা। প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় মীর রাশেদ বিন আমানকে বরখাস্ত করে সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। সে সময় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে কোম্পানির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস এবং আরেক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তখন এই অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিইও হিসেবে মীর রাশেদ বিন আমানকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। 

Link copied!