হাজতিরা হাজতিদের পেটান কাশিমপুর কারাগারে!

আহম্মেদ মুন্নী

জুন ২৬, ২০২৩, ০৫:০৩ এএম

হাজতিরা হাজতিদের পেটান কাশিমপুর কারাগারে!

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

গত ১৭ জুন সাধারন চুরির একটি মামলায় রুনা লায়লা নামের একজন নারী গ্রেফতার হয়ে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি হিসেবে আসেন। এরপরই তাকে ওই কারা কতৃর্পক্ষ হাজতি হিসেবে তিন পর্যায়ের তল্লাশি করে কারাগারে গ্রহন করে।

হাজতি রুনা লায়লা কারাগারের ভেতরে হল রুমে গিয়ে নিজের পোশাক বদলে ওয়াশরুম থেকে ফিরলে তার হাতে কিছু নগদ টাকা দেখতে পান অন্যরা। সাথে সাথে জেলার ফারহানা আক্তারকে অবহিত করলে ঘটনাস্থলে আসেন তিনি। কারণ একজন বন্দি তিন স্তরের নিরাপওা তল্লাশি পার করে ভেতরে টাকা কীভাবে নিয়ে এসেছে, প্রশ্ন উঠায় তারা!

এই ঘটনার জের ধরে হাজতি রুনা লায়লাকে জেলার ফারহানা আক্তারের নির্দেশে ডেপুটি জেলার জান্নাতুন তায়্যিবা, মেট্রন ফাতেমা, কারারক্ষি হাফিজা, কারারক্ষি সাহিদা, চিফ কারারক্ষী শামীমা, আলোচিত হাজতি নরসিংদীর শামীমা নূর পাপিয়া, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রক্সি, হাজতি আসামী আনন্দিকা, অবন্তিকা, মাদকের আসামী সোনালি এবং হাজতি পাপিয়ার কেস পার্টনার হাজতি তায়েবা মিলে বেধড়ক মারধর করেন।

রুনা লায়লাকে তারা পালা করে তিন ঘন্টা ধরে বেধড়ক মারধর করেন। ওই সময় রুনা বার বার আর্তচিকার করে বলতে থাকেন, আমি আমার কাছেই টাকা রেখেছিলাম। আপনারা চেক করে খুঁজে না পেলে সেটা তো আমার দোষ না। এই টাকা নিয়ে নেন। আমাকে তবুও মারবেন না।

কিন্তু তাতেও কেউ থামেনি। মারপিট চালাতেই থাকে উপরোক্তরা। সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে পেটাতে থাকে তারা। মারের চোটে আমার বোন পেশাব-পায়খানা করে দেয়! রক্ত বমি করে এবং এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় তাকে হল রুমে ফেলে রেখে চলে যায় সবাই।

২১ জুন এক হাজতি ওই কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে এসে জানায় এসব ঘটনা। তিনি এসব কথা রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিমকে প্রথমে জানান। এরপরই করিম তার বোনকে দেখতে ২২জুন কাশিমপুর কারাগারে ছুটে যান। সেদিন রাত আটটা পর্যন্ত কারাগারের সামনে বসেছিলেন। আইন মোতাবেক সব ধরনের আবেদন-নিবেদন করেও তিনি তার বোনকে দেখতে পারেননি।

এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে আব্দুল করিম রবিবার বলেন, আমার বোন সম্পর্কে যা শুনলাম তিনি বেঁচে আছেন কিনা, এখনো জানি না। ২২ জুন আমার বোনকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীও সাথে ছিল। তারা আমাকে দেখা করতে দেয়নি। উল্টো ডেপুটি জেলার তায়্যিবা একজনের সাথে দেখা করার কথা বলে। ফোন দিয়েছি বলে তিনি আমাকে হুমকি ধামকিও দেন। তাই আমি আর কারাগারে যাইনি। আমি গাজিপুর ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কারণ, জেলখানায় শনিবার ২৪ শে জুন আমার বোন হিসেবে যে নারীর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছে, সে আমার বোন নয়। আমার কাছে ফোনরেকর্ড আছে। সে আমাদের বাবার নাম বলতে পারেনি। তার কণ্ঠের সাথেও কোন মিল নেই। আমি আশংকা করছি, আমার বোন কি তাহলে বেঁচে নেই!

আমি বিশ্বাস করি যে, জেলের ভেতর আমার বোনকে পিটিয়ে আহত করে মূমুর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এমনকি আমার বোনকে হত্যাও করে থাকতে পারে। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে জেলার ফারহানা আক্তার রবিবার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, রুনা লায়লা নামের হাজতির কাছ থেকে ৭২০০ টাকা আমরা চেক করে পাই। কিন্তু টাকাটা দিতে সে অস্বীকৃতি জানায়। আমাদের একজন কারারক্ষী তার হাত থেকে টাকা নিতে গেলে তার সাথে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির এক পযার্য়ে হাজতি রুনা লায়লা আমার কারারক্ষীর মুখে খামচি মারে। অন্যরা এ সময় তাকে আটকাতে গেলে তাদের সাথেও ওই হাজতির মারামারি হয়। এ সময় অন্যরা এসে হাজতিকে আটকাতে সক্ষম হয়।

যেমনটা অভিযোগ উঠেছে যে রুনা লায়লা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা, এমন প্রশ্নে জেলার ফারহানা জানান, সে ভালো আছে। কাল তার ভাইকে পাঠিয়ে দিয়েন। বেলা ১২টায় স্যারের সাথে কথা বলে দেখা করার ব্যবস্থা করেছি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু হাজতি রুনা লায়লাই নয়, এরকম ঘটনা নিয়মিত ওই কারাগারে। এর আগেও যাবজ্জীবন সাজাভোগের আসামী রহিমা সুলতানাকে বেধড়ক মারধর করেছিল উপরোক্তরা। তারা শাহিদা নামের আরেক হাজতিকেও মারধর করেছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে বর্তমানে পাপিয়া জেলের চিফ রাইটার হিসেবে আছে। সকল বন্দি বিকেল ৫টার মধ্যে লকাপে (হাজত কক্ষে) প্রবেশ করলেও পাপিয়া রাত আটটা থেকে দশটার আগে লকাপে ফেরেন না। এমনও হয় পাপিয়া হেঁটে যাচ্ছেন তো কেউ তার দিকে তাকালে এ নিয়েও তাকে মারধর শুরু করে দেন। নিষিদ্ধ থাকলেও জেলের ভেতর তিনি স্মার্টফোনও ব্যবহার করেন।

তবে পাপিয়ার ফোন ব্যবহারের ঘটনা সত্যি নয় বলে দাবি করেছেন জেলার ফারহানা আক্তার।

 

Link copied!