ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় জড়িত অন্যতম সন্দেহভাজনকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এদিকে যে গাড়িতে করে ওই সংসদ সদস্যের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেই গাড়িও জব্দ করেছে সিআইডি। গত ৩০ এপ্রিল অনলাইন রেন্টালের মাধ্যমে গাড়িটি ভাড়া করে আততায়ীরা।
আরও পড়ুন: কে এই আনোয়ারুল আজিম আনার?
গত ১২ মে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় যান। এর পরের দিন ১৩ মে খুন করা হয় তাকে। ১৪ মে ওই ভাড়া গাড়িতে করে প্রথম পর্যায়ে সংসদ সদস্যের দেহাংশ ফ্ল্যাট থেকে বের করে একটি স্যুটকেসের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ির চালক জানান, ১৪ মে নারীসহ দুজনকে স্যুটকেসসহ এক্সেস মলের সামনে নামায়। অন্যদিকে সিআইডি সিসিভিটি ফুটেজ দেখে জানতে পেরেছে অ্যাক্সেস মলে নামানোর আগে নজরুল তীর্থের কাছে গাড়িটি ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল। তখন দেহাংশ কোথায় ফেলা হবে তা নিয়েই গাড়ির মধ্যেই মিটিংয়ের বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। এরপর তাদের অ্যাক্সেস মলের সামনে নামিয়ে দেয় চালক। ফলে সিআইডি মনে করে চালক অনেক কিছুই জানে যা সে বলছে না। তদন্তের স্বার্থে ওই চালককে আটক করেছে পুলিশ।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্তের জন্য ভারতীয় পুলিশের বিশেষ একটি টিম বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে কলকাতার গণমাধ্যম সূত্রে প্রথম খবর ছড়ায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সর্বপ্রথম পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, “ভারতে গিয়ে নিখোঁজ বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি গণমাধ্যম সূত্রে। তবে ইন্ডিয়ান বা কলকাতা পুলিশ আমাদের এখনও কিছু নিশ্চিত করেনি। তিনি জীবিত নাকি মৃত তা এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত নই। আমরা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। কারা তাকে খুন করেছে তা জানতে বাংলাদেশ-ভারতের পুলিশ কাজ করছে।”
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আটক ৩ জন বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজিম দেশের বাইরে যান। সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়। ভারতের পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “খুনের সঙ্গে ভারতের কেউ জড়িত নয়, বাংলাদেশিরাই খুন করেছে। সেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপের কোনো কারণ নেই। ভারত আমাদের যথেষ্ট কো-অপারেশন করছে। আমাদের কাছে আরও তথ্য আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন জানাতে পারছি না।”
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনার হত্যার কারণ জানতে নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে পুলিশ।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এ ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ এলাকার জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তার এলাকার সাধারণ মানুষ স্তম্ভিত। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য। এটি নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, এটা মনে করেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না।”