অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনী ব্যবস্থা নেব, বললেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৫, ২০২১, ০৪:০৪ এএম

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনী ব্যবস্থা নেব, বললেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ

সাবেক সেনাপ্রধানের মত একটি দায়িত্বশীল পর্যায়ে ছিলাম বিধায় ব্যক্তিগত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেইনি। কেন না তখন অনেকেই হয়ত প্রশ্ন তুলত যে, আমি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচার আমার পক্ষে নেব। কিন্তু আগামী জুন মাসের ২৫ তারিখের পর আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছি। শুক্রবার ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়নি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের খবর পুরোটা অপপ্রচার জানিয়ে আজিজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি কারও ভিসা বাতিল করে, আগে তাদেরকে জানিয়ে দেয়। আমি চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছি। যদি আসলেই ভিসা বাতিল হতো, তাহলে আরও আগে তারা জানিয়ে দিত। আমার জানামতে এখনও আমার ভিসা রয়েছে।

আগেই  স্পাইওয়্যার কেনা হয়েছে

স্প্যাইওয়ার যন্ত্রপাতি মূলত জাতিসংঘের নীতিমালা অনুসারেই কেনা হয়েছে। কিন্তু ওই ক্রয় সংক্রান্ত কোন কিছুর দায়িত্বেই আমি ছিলাম না। কেন না আমি দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর আগ থেকেই এই যন্ত্র কেনার পরিকল্পা ও কাজ চলছিল। আমি ২০১৮ সালের ২৫শে জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাই। কিন্তু এই স্পাইওয়্যার ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর কেনার জন্য যাচাই বাচাই করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি এ বিষয়টি নৈতিক সিদ্ধান্তের পর ২১ শে সেপ্টেম্বর তা কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরের বছর ২০১৮ সালে ৪ ই জুন এটা কিনতে হাঙ্গেরির পিক সিক্সকে মেইল দেয় এবং ২৬ শে জুন এটা কেনা হয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পর হলেও পুরো পরিকল্পনা দুই বছর আগ থেকে হয়েছে। আর এটিতে হাঙ্গেরি লেখা ছিল সুতরাং ইসরাইলের পণ্য হবার প্রশ্নও আসে না। 

সামরিক সরঞ্জাম কেনার সাথে তার বা তার পরিবার-স্বজনদের সম্পৃক্ততা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি কেউ যদি কোনো একটা ‘এভিডেন্স' দিতে পারে যে আমি বিজিবিতে থাকাকালে, আমি সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোন ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো ‘আর্মস, ইকুয়েপমেন্ট, অ্যামুনেশন প্রক্রিউরম্যান্ট, কন্ট্রাক্ট’ দিয়েছি এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে ‘আই উইল অ্যাকসেপ্ট অ্যানিথিং৷ আই অ্যাম রেডি৷’’

ছেলের বিয়ের আগেই ভাইকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করেন

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বলেন, আসলে একদিনেই তো রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেন না। ছেলের গায়ে হলুদসহ অনেক অনুষ্ঠান তখন হয়েছে। কিন্তু তখন তো তারা উপস্থিত ছিল না। তাই তারা যে হুট করে এসেছে, এমনটাও না। আর মামলাগুলো মিথ্যা ছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, আমার ভাই ২০০৭ সালে মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম করে সেখানে থাকত। সিঙ্গাপুরে একটা বৈঠক ছিল তখন আসার পথে এপ্রিল মাসে ভাইয়ের সাথে দেখা করেছি। দূতাবাসের আমন্ত্রণে তারা আমার সাথে দেখা করে। পরে তারা সকল ধরনের আইন মেনেই দেশে ফিরেছে। 

কর্নেল শহীদের সাথে ফোনালাপ ক্লোনিং ইস্যু

সেনাপ্রধান থাকার সময়ে কোর্সমেট লন্ডন প্রবাসী কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে বলে অপপ্রচার হয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তিগত কারণে ভয়েস ক্লোনিং করা খুব সহজ। তাই এই বিষয়টা আমাকে হেনস্থা করার জন্য ভয়েস ক্লোনিং করা হয়েছে। আগামী ২৫ শে জুন আমার সকল ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ইস্তফা পাব। তারপরই এই ধরনের অপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী সফল

গত নিবার্চন প্রসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা বের হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর যা দায়িত্ব তাই তারা পালন করেছে। সেখানে তাদের কী দায়িত্ব থাকবে, সেটা উল্লেখও থাকে। এর বাইরে কোন কিছু আমরা করিনি। আমরা স্ট্রাইকিং ফোর্স আমরা অন্যান্য কাজ করতে পারি না। নির্বাচনে সময়ে আমাদের যে দায়িত্ব ছিল তা সফলভাবে পালন করেছে সেনাবাহিনী। তাই এই হিসেবে আমরা সফল। কেন্দ্রে ভোট দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমাদের দায়িত্ব শুধু নিরাপত্তা দেওয়া। এর আগে বহু নির্বাচন আমি প্রত্যক্ষ করেছি। সেইসব নির্বাচনের তুলনায় গত নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ।

সবচেয়ে যোগ্য হিসেবে সেনাপ্রধান হয়েছি

সেনাপ্রধানের নিয়োগের ক্ষেত্রে আমিসহ তিনজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন। এই তিনজনের যে কেউ তখন সেনাপ্রধান হতে পারত। তবে সবচেয়ে যোগ্য হিসেবেই সরকার আমাকে বিবেচনা করেছে। ২০১৮ সালের পর সেনাপ্রধানের নিয়োগ সরকারের এখতিয়ারে আসে। সরকারের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ প্রদান করেন। এখানে অভিজ্ঞতা, সার্ভিস প্রোফাইল, পারফর্ম, কোর্স ইত্যাদি বিবেচনা করে দেওয়া হয়। আমি ১০টা মিলিটারি কোর্স করেছি, তারমধ্যে ৮টি কোর্সে ভাল ফলাফল করেছি। সেনাবাহিনীর এমন কোন সেক্টর নেই, যেখানে আমি ছিলাম না। বাকি দুজনের তুলনায় আমিই শুধু বিজিবি কমান্ড করেছি। একজন আনসার ও ভিডিপি কমান্ড করেছে। সব মিলিয়ে আমাকে সরকার যোগ্য মনে করেছে। 

গলফ খেলে সময় কাটে 

ভবিষত পরিকল্পনা কি এমন প্রশ্নে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ৩৯ বছর ধরে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলাম। এখন পিএইচডি করছি। সেখানে বিভিন্ন গবেষণা কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আমার অবসরপ্রাপ্ত কলিগ ও কর্মরত কলিগদের সাথেও এখন গলফ খেলতে যাই। এভাবেই আমার অবসর চলছে। 

Link copied!