উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ না দিয়ে আরও জমি অধিগ্রহণ চায় বিসিক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৪:৪৯ এএম

উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ না দিয়ে আরও জমি অধিগ্রহণ চায় বিসিক

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনের জন্য প্লট বরাদ্দ দিয়ে আসছে বিসিক। কিন্তু যথাযথ জ্বালানি সংযোগের পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না করার ফলে উদ্যোক্তারা বিসিকের প্লটে আগ্রহী নয়। বর্তমানে ১ হাজারেরও বেশি প্লট খালি থাকার পরও আরও বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে চায় বিসিক।

দক্ষিণবঙ্গে প্লট খালি বেশি

সারা দেশে বিসিকের ৮০টি শিল্পনগরীতে এখনো এক হাজার ২৪৪টি প্লট বরাদ্দ হয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় এমন প্লট রয়েছে প্রায় ৪০০টি। এর পরও এসব জেলায় শিল্পায়নে প্রায় চার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জেলাগুলোর বিসিক কার্যালয় থেকে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন তা যাচাই-বাছাই করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনের জন্য প্লট বরাদ্দ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

বিসিকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে বরিশালে প্রায় ১৩১ একর জমির ওপর শিল্পনগরী স্থাপিত হয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে শিল্পনগরীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০। গত অক্টোবর পর্যন্ত এসব নগরীতে মোট প্লটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯২২। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৬৭৮টি। এক হাজার ২৪৪টি প্লটের বরাদ্দ এখনো বাকি। বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলোতে মোট পৌনে ছয় হাজারের মতো শিল্প ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে চার হাজার ৪৩৪টি। নির্মাণাধীন ৭৪৭টি এবং রুগণ বা বন্ধ ৫৫৯টি কারখানার কার্যক্রম। চালু থাকা শিল্প ইউনিটগুলোতে মোট ছয় লাখ ২৯ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পর একজন উদ্যোক্তার অবকাঠামো বা কারখানা নির্মাণ শুরু করতে হয়। ২৪ মাসের মধ্যে কেউ যদি অবকাঠামো নির্মাণ করে উৎপাদনে যেতে না পারেন, তাহলে প্লট বাতিল করার বিধান রয়েছে। প্লট বাতিল বা বাতিল না করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগও রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিসিকের পক্ষ থেকে উদ্যোক্তাদের কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হয়। সব শেষে কোনো উপায় না থাকলে প্লট বাতিল করা হয়।

বিসিক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার শিল্পায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে এসব জেলায় প্রায় চার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিক শিল্প নগরীতে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় যাচাইয়ের পর কত একর জমি বিসিকে যুক্ত করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দাম বেশি সময় কম

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওই ২১ জেলায় অন্তত ৯টিতে প্লট খালি পড়ে থাকার পরও জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিসিক কার্যালয় থেকে। ৬২ বছর আগে স্থাপন করা বরিশাল বিসিকে ৪৭০টি প্লটের মধ্যে এখনো ১০৯টি প্লটের বরাদ্দ হয়নি। তবু এই জেলায় নতুন করে ২৫০ থেকে ৩৫০ একর জমি বিসিকে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোপালগঞ্জে ৫০ একর জমির ওপর স্থাপিত শিল্পনগরীতে ফাঁকা ১৩০টি প্লট। নতুন করে আরো ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ২৫ একরের ৭৮টি প্লটের মধ্যে ১৯টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ফাঁকা ৫৯টি। বরগুনায় ১০ একর জমিতে ৬০টি প্লটের মধ্যে ফাঁকা ২৪টি। ঝালকাঠিতে ১১ একর জমিতে ৭৯টি প্লটের মধ্যে ফাঁকা আছে ২৯টি। আরো ফাঁকা পড়ে আছে পটুয়াখালীতে ছয়টি, ভোলায় চারটি, মাদারীপুরে ২৬টি ও শরীয়তপুরে একটি।

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সভাপতি মির্জা নুরুল ঘানি শোভন বলেন, ‘যেসব প্লট খালি পড়ে আছে, সেগুলো কিছু কিছু বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এখানে সমস্যা হলো, আগে প্লটের মূল্য ২০ বছরে পরিশোধ করা যেত। সেটা এখন কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। অন্যদিকে দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে। কোনো শিল্পই পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।’

দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৩৬২টি প্লটের বরাদ্দ হয়নি। খাগড়াছড়িতে ৩৩টি, শ্রীমঙ্গলে ১২২টি, রাজশাহী-২ (নতুন)-এ ২৮৬টি প্লট ফাঁকা।

বিসিক জানায়, গত জুলাইয়ে সারা দেশের ২৩টি বিসিক শিল্প নগরীর মধ্যে ৬৯৪টি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। নতুন শিল্পনগরী নরসিংদী, ভৈরবসহ অন্যান্য জেলার বরাদ্দ না হওয়া প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে বিসিকের শিল্প উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তি দিই। কিন্তু প্লট বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। আমাদের পক্ষ থেকে ডিসি সাহেবদের বলা আছে, শিল্পনগরীগুলোতে যেন ভালো উদ্যাক্তা ও নারীদের প্লট দেওয়া হয়। কোনো ধরনের তদবির বা রাজনৈতিক প্রভাবে যেন প্লট না দেওয়া হয়। নারীদের জন্য ১০ শতাংশ প্লট রাখার নিয়ম কার্যকর করছি। আগে ব্যাংকে টাকা না থাকলেও চেক দিয়ে প্লট বরাদ্দ নিতেন। কিন্তু এখন আর তা হবে না। এখন ২০ শতাংশ পে অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে। যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের ব্যাংকে এক বছরের লেনদেনদের হিসাব দিতে হবে। এভাবে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

বরাদ্দ না হওয়া প্লটের বিষয়ে পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘যাঁরা প্লট নিয়ে ফেলে রেখেছেন, সেগুলো বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসকদের আমরা বলেছি। কিন্তু সমস্যা হলো, প্লট বাতিল করলে তাঁরা এর বিরুদ্ধে আপিল করেন। এ জন্য আমরা আগে থেকে যাচাই-বাছাই করে প্লট বরাদ্দ দেব, যাতে কেউ প্লট ফেলে রাখতে না পারেন।’

বরিশাল বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহমুদ বলেন, ২০১৫ সালে বরিশালে প্লট বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্লট চেয়েছে। একই সাথে ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

Link copied!