সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সূচকে এশিয়ায় ৫ম স্থানে বাংলাদেশ: গবেষণা

ডেস্ক রিপোর্ট

জুলাই ৫, ২০২১, ০৭:৪২ পিএম

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সূচকে এশিয়ায় ৫ম স্থানে বাংলাদেশ: গবেষণা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে দেশের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ঊর্ধ্বগতির সূচকে বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম অবস্থানে। আফ্রিকার দেশগুলোকে বাদ দিয়ে বিবেচনা করলে  দেশগুলো বাদ দিয়ে বিবেচনা করলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সূচকে বাংলাদেশ ১৬তম স্থানে অবস্থান করছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশনের (সিআরআইডিএ) করোনাভাইরাসের সংক্রমন বিষয়ক বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (৫ জুলাই) সিআরআইডিএ-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার রোজেন গণমাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআরআইডিএ বিশ্লেষণ অনুযায়ি, ১ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সূচক বা রিপ্রোডাকশন রেট হচ্ছে ১.৪১। এর অর্থ সংক্রমণ প্রতি ১০০০ জন থেকে ১৪১০ জনে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের উচ্চ রিপ্রোডাকশন রেট ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশ এখনও সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছায়নি। কিন্তু জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে লকডাউন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সংক্রমণ ২-৩ সপ্তাহ পর স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে।

সিআরআইডিএ সূত্র জানায়, ২১-২৭ জুনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬০টি জেলায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী (রিপ্রোডাকশন রেট ১.০০’র বেশি) এবং কেবল লালমনিরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলায় সংক্রমণের গতি নিম্নমুখী (রিপ্রোডাকশন রেট ১’র কম)।

এর আগে, গত ২৬ জুন প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, সারাদেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের অবিশ্বাস্য ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। দেশে মোট ৬৪ জেলার ৫৯টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৮ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের ৫৯টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ের (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি)।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে মৃত্যুহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জুনের ১৮ তারিখে দৈনিক মৃত্যু ছিল ৫৪, যা ৭ দিনের ব্যবধানে বেড়ে ১০৮ জন হয়েছে।

ডা. শাহরিয়ার রোজেন গণমা্ধ্যমে বলেন, রিপ্রোডাকশন রেট সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক। গত ৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য যখন তাদের মহামারির দ্বিতীয় ঢেউকে দমন করতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করতে বাধ্য হলো, তখন দেশটিতে রিপ্রোডাকশন রেট ছিল ১.২১, যা আমরা বাংলাদেশ দেখেছে জুনের ৬ তারিখে।

৮ এপ্রিল যখন উচ্চ সংক্রমণের জন্য কানাডার অন্টারিও প্রদেশে লকডাউন এবং ঘরবন্দির আদেশ জারি করা হয় তখন রিপ্রোডাকশন রেট ছিল ১.২। এই তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কতটা আকাশচুম্বী এবং ভয়াবহ।

তিনি বলেন, সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য বাংলাদেশে অনেকদিন পর্যন্ত এই সূচকটি ব্যবহার করা হয়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ রিপোর্টে এই সূচকটি ব্যবহার করা হয়েছে।

সংক্রমণের ভয়াবহতার কারণ মূলত দুটি

বাংলাদেশে সংক্রমণের এই ভয়াবহতার কারণ মূলত দুটি বলে সিআরআইডিএ’র বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ হচ্ছে- বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে অনীহাভাব প্রকাশ। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন। আর দ্বিতীয় কারণ অধিক সংক্রমণক্ষম ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রভাব।

বিভিন্ন দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উদাহরণ টেনে বিশ্লেষণে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের সকল সংক্রমণই (৯৯ শতাংশ) হচ্ছে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দিয়ে। ১ জুলাই যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রভাবে ২৭ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে; জানুয়ারির পর এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। ভারতীয় এই ভেরিয়েন্টের কারণে রাশিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ আবার বেড়ে চলেছে। আফ্রিকাতে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের দ্বারা আশংকাজনকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ৭টি প্রধান শহরে লকডাউন দেওয়া হয়েছে।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় 

সিআরআইডিএ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র সরকারি পদক্ষেপের মাধ্যমে এই ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্ব এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরার জন্য জনসাধারণকে দুটি নির্দেশনা মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, সঠিক নিয়মে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব ধরণের জনসমাগম পরিহার করতে হবে।

সার্জিকাল মাস্ক সকল ধরনের ভেরিয়েন্টের বিপক্ষে সুরক্ষা প্রদান করে উল্লেখ করে সিআরআইডিএ-এর বিশ্লেষণে আরও বলা হয়, গ্রামাঞ্চলে সার্জিকাল মাস্ক পাওয়া না গেলে তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের ৯৬ ভাগ লোক এখন পর্যন্ত ভ্যাকিসিন না পাওয়ায় মাস্ক পরfসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বলেও সিআরডিএ’র বিশ্লেষণে বলা হয়। 

বাংলাদেশের শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষ এখনও ভ্যাকসিন না পাওয়ার কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলেও সিআরআইডি ‘র বিশ্লেষনে বলা হয়।

সিআরআইডিএ’র বিশ্লেষণ ও লেখচিত্র প্রস্তুত করেছেন প্রতিষ্ঠানের এপিডেমিওলজি বিভাগের ডা. কেএম তৌহিদুর রহমান, ডা. শাহরিয়ার রোজেন, ডা. আয়শা আকতার এবং ডা. নাজিফ মাহবুব।

 

Link copied!