সুদান থেকে দেশে ফিরতে যা যা করতে হবে বাংলাদেশী নাগরিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ১১:৪২ পিএম

সুদান থেকে দেশে ফিরতে যা যা করতে হবে বাংলাদেশী নাগরিকদের

ক্ষমতা দখলে দুই জেনারেলের মধ্যে চলা রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন সুদান। প্রতিদিনই দেশটির রাজধানী খার্তুম থেকে পালাচ্ছে মানুষ। এরইমধ্যে নিহত হয়েছে সামরিক-বেসামরিক পাঁচ শতাধিক মানুষ। লড়াইয়ের তীব্রতায় ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। 

সুদানে লড়াইয়ের কেন্দ্রে আছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। সম্প্রতি এটি প্রকাশ্যে আসে। শুরু হয় সশস্ত্র লড়াই। বেশ কয়েক দিনের সংঘাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এ জন্য দেশে ফিরতে ইচ্ছুক সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দূতাবাসের হটলাইন নম্বরগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় ফেসবুক পোস্টে দুজনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও দিয়েছে। সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি নাগরিক আছেন।

যারা দেশে ফিরতে চান, তাঁদের +2349097551790 (হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বরে খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি একরামুলের সাথে অথবা +8801737125349 (হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছে। 

সুদানে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে গত ১২ দিনে কমপক্ষে দুবার আক্রান্ত হয়েছে রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনও। ১৫ ও ২২ এপ্রিল ভবনগুলোর কয়েকটি স্থানে দেয়াল ও জানালা ভেদ করে ভেতরে এসে পড়ে মেশিনগানের গুলি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ২০ এপ্রিল রাষ্ট্রদূত সপরিবারে দূতাবাস ও বাসস্থান ছেড়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে চলে যান।

এ অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরানোর প্রস্তুতি শুরু করে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরিতে করে প্রথমে সৌদি আরবের জেদ্দায়, সেখান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা ভাবছে সরকার। পুরো বিষয়টি জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা অফিসকে অবহিত করা হয়েছে।

তারেক আহমেদ জানান, তিন দিন আগে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মানুষ দেশে ফিরতে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই ৫০০ লোকের সবাই ফিরবেন কি না, সে ব্যাপারে সংশয় আছে। 

যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের কবে নাগাদ সরিয়ে নেওয়া শুরু হতে পারে, জানতে চাইলে তারেক আহমেদ বলেন, কয়েকটি দেশ ২২ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নিজেদের নাগরিকদের খার্তুম থেকে বন্দরনগরী পোর্ট সুদানে সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার তাঁদের বন্দরে পৌঁছানোর সাথে সাথে জাহাজেও তোলা যায়নি। এ অবস্থায় কয়েক হাজার বিদেশি মানুষের সেখানে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু নিশ্চিত করা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। 

নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা দেশে ফিরবেন, তাঁদের অনেকের হালনাগাদ পাসপোর্ট না-ও থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তারেক আহমেদ বলেন, সে ক্ষেত্রে তাদের বিকল্প হিসেবে ‘ট্রাভেল পারমিট’ দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অন্তত দুই দিন লাগতে পারে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, খার্তুম থেকে বাসে পোর্ট সুদান, সেখান থেকে জাহাজে জেদ্দা, এরপর জেদ্দা থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটে যাত্রীদের তোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অপেক্ষার সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। 

Link copied!