৪৪ বছর পর ইউরোপের কন্টেইনার জাহাজ চট্টগ্রামে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৫, ২০২১, ০৯:৪৬ পিএম

৪৪ বছর পর ইউরোপের কন্টেইনার জাহাজ চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের দেশ ইতালিতে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রায় ৪৪ বছর পর ইউরোপের দেশগুলোতে পরীক্ষামূলক এই চলাচল সফল হলে দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে  এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং দেশের তৈরি পোশাক শিল্প সেক্টরের কর্মকর্তারা।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ইতালির বন্দর থেকে খালি কনটেইনার নিয়ে আসা একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো হয়। ১৯৭৭ সালের পর ইউরোপ থেকে কন্টেইনার জাহাজ চলাচলের এটি প্রথম ঘটনা। বিশ্বজুড়ে কন্টেইনার পরিবহনের ভাড়া যখন তিন গুণের  বেশি বেড়েছে, ঠিক তখনই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে চালু হলো কন্টেইনার জাহাজ।

ইতালিতে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় এখন থেকে পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে-এমনটি জানালেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, “বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার তানজুম পালাপাস ও কেলাং এবং চীনের কয়েকটি বন্দর হয়ে রপ্তানি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে যায়। একই রুটে বাংলাদেশেও আসে পণ্য। এতে সময় যেমন ব্যয় হয়, তেমনি খরচও বেড়ে যায় অনেক।”

তিনি বলেন, “এখন থেকে সরাসরি ইতালিতে কন্টেইনার  জাহাজ চলাচল করায় প্রথম কথা প্রায় ১০-১২ দিনের মতো সময় বাঁচবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার জাহাজগুলোর আর  সিংগাপুর বা এশিয়ার অন্য কোনো বন্দরে যাওয়ার  প্রয়োজন পড়বে না। সরাসরি ইউরোপের ইতালিতে যাবে।  সেখান থেকে যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য  দেশে অনয়াসেই যেতে পারবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হলে গার্মেন্টস সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজেএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন,“ দীর্ঘনি পর হলেও  চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের ইতালিতে কন্টেইনার জাহাজ চলাচল নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। এতে একদিকে যেমন পণ্য পৌঁছতে সময় কমবে, তেমনি পরিবহন খরচও কমে যাবে।”

বিজেএমইএ সভাপতি আরও বলেন, “ইতালির পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও  এই সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে।পাশপাশি কন্টেইনার জাহাজের সংখ্যাও অনেক বাড়াতে হবে। যত বেশি জাহাজ চলাচল করবে, তত বেশি আমাদের পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদেশে পাঠাতে পারবো।”

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভায়া হয়ে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন  দেশে একেকটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া  আগে ছিল দুই হাজার মার্কিন ডলার। এখন তা  বেড়ে হয়েছে  ৮ থেকে ১০  হাজার মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনার পরিবহনের বর্তমান ভাড়া  বেড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার ডলার হয়েছে।

ফারুক হাসান বলেন, “শিপিং সংখ্যা বেড়ে গেলে গার্মেন্টসের শিপমেন্ট সমস্যাটা অনেকাংশে কমে যাবে। রপ্তানি পণ্য পরিবহনে অন্তত আট-দশ দিন সময় সাশ্রয় হবে। পাশপাশি পরিবহন খরচও কমে যাবে। চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা চীনের বন্দরে নিয়ে সেখান  থেকে বড় জাহাজে জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা ও প্রতিযোগিতা আর করতে হবে না। সরকারের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এবিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর  ইতালিতে পরীক্ষামূলকভাবে ছোট আকারের কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষার সফলতার বিষয়টির ওপর  নির্ভর করে ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরণের জাহাজ চলাচলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Link copied!