লালবাগ কেল্লা। ফাইল ছবি
১৬১০ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলার সুবাদার করে পাঠান ইসলাম খানকে।
ঢাকায় এসেই তিনি এর নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। সেই সঙ্গে নির্মাণ করেন অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন মুঘল স্থাপনা। আর আজ আমরা ঢাকায় সাতটি মুঘল স্থাপত্য সম্পর্কে জানবো। চলুন জেনে আসা যাক-
লালবাগ কেল্লা
প্রথমে এর নাম দেওয়া হয় কেল্লা আওরঙ্গবাদ। কালের পরিক্রমায় তা হয়ে যায় লালবাগ কেল্লা। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ সালে ঢাকার সুবাদারের বাসস্থান হিসেবে এর নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ শুরু হয়। তখন সম্রাট আওরঙ্গজেবের ডাকে শাহজাদা আজম শাহকে দিল্লি যেতে হয়। ফলে দুর্গের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়।
এরপর ১৬৮০ সালে পুনরায় ঢাকায় এসে দুর্গটির নির্মাণকাজে হাত দেন শায়েস্তা খান। তবে তার কন্যা পরী বিবির মৃত্যু হলে একে অপয়া বলে মনে করতে থাকেন। ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন তিনি।
বড় কাটরা
পুরান ঢাকার চকবাজারের দক্ষিণে অবস্থিত বড় কাটরা সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহজাদা সুজার নির্দেশে ১৬৪৪-১৬৪৬ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মির্জা আবুল কাসিমের তদারকিতে ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। এই কারণে তিনি মীর-ই-ইমারত নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
এখানে শাহজাদা সুজার বসবাসের কথা থাকলেও পরবর্তীতে এটা মুসাফিরখানা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এটা এখন জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম, বড় কাটরা মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে আছে।
ছোট কাটরা
মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের শাসনামলে নির্মিত হয়েছে ছোট কাটরা। আনুমানিক ১৬৬৩-১৬৬৪ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৬৭১ সালে তা শেষ হয়।
ইমারতটি দেখতে বড় কাটরার মতো হলেও আকৃতিতে ছোট। তাই একে ছোট কাটরা বলা হয়। ১৮১৬ সালে খ্রিস্টধর্মপ্রচারক লিওনার্দ এখানে ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল খোলেন।
নিমতলী কুঠি
১৭৬৫-১৭৬৬ সালে ঢাকার নায়েব নাজিম জসারত খানের জন্য পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় একটি বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। আদি ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে এটি নিমতলী কুঠি নামে পরিচিত।
সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার, হল, বাগান, জলাধার, সৈন্যদের বাসস্থান, মসজিদ প্রভৃতি ছিল। এছাড়া বারো দরজাওয়ালা একটি বারোদুয়ারী নামের কামরাও ছিল।
শেষ নায়েবে নাজিম নওয়াব গাজীউদ্দিন অত্যন্ত অসৎ ছিলেন ও পারিবারিক সব সম্পত্তি উড়িয়ে দেন। ১৮৪৩ সালে তার মৃত্যু হলে নিমতলী প্যালেসের দুর্দিন শুরু হয়। বারবার এর মালিকানা বদল ও ভাঙাগড়া চলতে থাকে।
বিংশ শতাব্দির শুরুতে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার পুরো নিমতলী এলাকা অধিগ্রহণ করে নেয়।
নিমতলী প্যালেস ও এর আশেপাশের জমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীন। একসময়ের বিপুলায়তন প্রাসাদের এখন একমাত্র পশ্চিমদুয়ার ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ‘নিমতলী দেউড়ি’ নামে পরিচিত সুদৃশ্য এই ফটক এখনও সেই পুরনো মুঘল স্থাপত্যের শেষচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মুসা খান মসজিদ
মসজিদটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় শহীদুল্লাহ হলের পশ্চিমে অবস্থিত। এর ঠিক পেছনে আছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সমাধি।
জনশ্রুতি আছে, ঈসা খানের পুত্র মুসা খান এটি নির্মাণ করেন। তবে এর নির্মাণশৈলী দেখে একে শাহবাজ মসজিদের সামসময়িক বলে মনে হয়।
৩ গম্বুজওয়ালা এই মসজিদ একসময় সীমানা দেয়ালে বেষ্টিত ছিল, যা এখন আর দেখা যায় না। মসজিদটি একটি উঁচু কাঠামোয় নির্মিত। এর অনেক কক্ষে প্রাচীরে বইয়ের তাক দেখা যায় যা থেকে মনে হয়, একসময় এটা মাদ্রাসা-মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
আগে মসজিদের ভেতরে ও বাইরে পদ্ম, কলসসহ বেশ কিছু নকশা ছিল। বর্তমানে এটি সিমেন্ট প্লাস্টার ও চুন দ্বারা আচ্ছাদিত।
সাত মসজিদ
রাজধানীর ধানমন্ডিতে মুঘল সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে আছে সাতগম্বুজ মসজিদ। চারটি মিনারসহ তিনটি গম্বুজের কারণে মসজিদের এই নাম হয়েছে।
১৬৮০ সালে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের শাসনামলে তার পুত্র উমিদ খান মসজিদটি নির্মাণ করেন। লালবাগ দুর্গ ও খাজা আম্বর শাহ মসজিদের সঙ্গে এই মসজিদের গঠনশৈলীর মিল আছে।
ঢাকা গেট
ঢাকা গেটের আরেক নাম মীর জুমলা গেট। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল সুবাদার ঢাকা গেট নির্মাণ করেন। এই গেটের তিনটি অংশের একটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে রোড ডিভাইডারের মাঝে এবং অন্য অংশ আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তিন নেতার মাজারের পাশে।