ছোটবেলার সালামি বড় হয়ে ফেরত পেয়েছেন?

সম্পা আক্তার

এপ্রিল ৮, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম

ছোটবেলার সালামি বড় হয়ে ফেরত পেয়েছেন?

সময় বদলালেও বদলায়নি ঈদ সালামির রীতি। দিন দিন এই রীতির প্রচলন যেন আরও জোরদার হচ্ছে। ঈদ এলেই বড়দের কাছ থেকে চকচকে নোটের আশায় থাকে ছোটরা। বড়রাও কচকচে নোটের বান্ডিল সংরক্ষণে ব্যস্ত থাকেন। এ যেন অলিখিত, অলঙ্ঘনীয় এক রীতি।

সালামি বা সেলামি শব্দের অর্থ উপহার, নজরানা প্রভৃতি। ঈদের আনন্দকে সবচেয়ে মধুময় করে তোলে এই সালামি। ছোটবেলা থেকেই আমরা পুরো রোজার মাস অপেক্ষা করতাম বড়দের থেক কখন সালামি আদায় করতে পারবো সেই আশায়। কারন এই সালামির টাকা নিয়ে থাকত সারা বছরের নানা পরিকল্পনা। এ সময় মা নানাভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে বলতেন তার কাছেই পুরো সালামি জমা রাখতে। বোকার মত অনেকেই পুরো টাকাটা তুলে দিতাম মায়ের হাতে। তবে পরে সেই টাকাটা মায়েদের কাছ থেকে আমরা কি আর কেউ ফেরত পেয়েছি?

এমন প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলাম ‘৯০ দশকের অনেকের কাছে। যারা এক যুগ আগেই এই সালামি পাওয়ার স্বাধ ঘুচিয়েছে। তবে মনে রেখেছে ছোট্ট বেলার ইদের দিনের স্মৃতিময় সেই সালামির কথা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ জানায়, ‘মায়েরা কখনো সালামি ফেরত দেয় না । তবে আমাদের সেই সামামির টাকা তারা কোনো ভালো কাজে লাগাত যা বড় হওয়ার পর বুঝেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাইমা বলেন, ‘আমার সালামি মা ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার কাছে রাখতে বলতেন তবে সেটা আর কোনোদিন ফেরত পাইনি। তবে আমার সেই টাকা দিয়েই হয়ত তারা আমাকে আরও একটা নতুন পোশাক বা জুতো কিনে দিতেন। কিংবা একদিন আমার বাবা মা আমাকে এই টাকা দিয়ে ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতেন। তখন সেগুলো বুঝতে না পারলেও সেই স্মৃতি বয়েই আমরা কখন যেন বড় হয়ে গেলাম।

ঈদের দিনে ছোটদের খুশি করতে টাকাপয়সা বা অন্য কোনো উপহারের মাধ্যমে সালামি দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে কেবল বৈধ রীতিই নয়, বরং তা প্রশংসনীয়ও বটে। কারণ ছোটদের উপহার দিতে এবং আদর-স্নেহে উৎসাহ দেয় ইসলাম ধর্ম। এতে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বাড়ে। ঈদের আনন্দে যোগ হয় নতুন মাত্রা।

নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা আবির বলেন, ‘সালামি কেবল টাকাই না, যেকোনো উপহারও হতে পারে। ছোটবেলায় একটা ১০ টাকার নোট কেউ সালামি দিলেও আকাশ সময় খুশি হয়ে যেতাম। তাই একে টাকার অঙ্কে মূল্যায়নের কিছু নেই। এটিই আমাদের সামাজিক সৌন্দর্য। আগে আমি যেমন বড়দের থেকে সালামি পেলে খুশি হতাম এখন ঠিক একইভাবে ছোটদের সালামি দিয়ে আনন্দ পাই। তবে ছোটবেলাটাকেই বেশি মিস করি। সব সালামি গুলো জমিয়ে আম্মুর কাছে রাখতাম । আম্মু সেটা আজও ফেরত দেয় নি। এখন তো আমার সব বেতনের টাকাই আম্মুকে দেই তবু সেই টাকার আনন্দটা অন্যরকম ছিল যা আর চাইলেও পাবো না।’

শৈশবের ঈদ সালামির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেকে আবার বলেন, ‘বয়স যাই হোক না কেন, সম্পর্কে বড় হলে ঈদ সালামি অনিবার্য। এছাড়া কে কত ঈদ সালামি পেল, তা নিয়েও এক নীরব প্রতিযোগিতা চলে। সেই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে চায় শিশুরাই।’

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, মধ্যযুগের শুরুর দিকে ঈদ সালামির প্রচলন শুরু হয়। ফাতিমীয় খেলাফতের সময় সমাজের শিশু-কিশোর এবং প্রবীণ অধিবাসীদের অর্থ, মিষ্টান্নজাতীয় খাবার, অথবা পোশাক উপহার দেওয়া শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলুক সাম্রাজ্যের আমলে পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার জন্য ঈদের সময় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ দেওয়া শুরু হয়।

আর্থিক সামর্থ্য ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে সালামি কমবেশি হতো। উসমানীয় সাম্রাজ্যের শেষ দিকে এসে এই প্রথা ব্যাপকভাবে পারিবারিক পরিসরে বিকশিত হয়। দেশে দেশে ইসলামের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ঈদ সালামির রীতিও সম্প্রসারিত হয়। পরে এই রীতি ভারতীয় উপমহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে।

Link copied!