বিএনপি-জামায়াত জোট অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে, বললেন মির্জা ফখরুল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৩০, ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম

বিএনপি-জামায়াত জোট অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে, বললেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

জামায়াতের সঙ্গে জোট অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি।

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের জোট ছিল এবং দীর্ঘদিন আপনারা দলটির সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখেছেন। জামায়াতের সঙ্গে আপনার দলের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে?”

জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের যে জোট ছিল, আন্দোলনের জন্য জোট, সেটা অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এটা এখন কোনও কাজ করে না।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক আগেই আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রোগ্রাম ঠিক করে যুগপৎ আন্দোলন করেছি সরকার পতন অবধি। এটা এখন বলবত নেই। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি, কারণ এখনো কেয়ারটেকার সরকার আছে, এরপর নির্বাচন আছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা বজায় রাখছি, এটা জরুরি। এই মুহূর্তে আমাদের কোনও জোট নেই। আমরা জোটবদ্ধ নই।”

এ সময় নির্বাচন সংক্রান্ত আরেকটি প্রশ্ন করা হয় তাকে। প্রশ্নটি ছিল- “রাজনৈতিক দল সবসময়ই নির্বাচনমুখী। নির্বাচনে যাওয়ার আগে দলকে কীভাবে সংগঠিত করবেন, আপনাদের পরিকল্পনা কী?”

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা গত ১৫ বছর কখনোই বসে ছিলাম না। আমরা ভার্চুয়ালি সব জেলা-উপজেলায় মিটিং করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্ত হয়েছেন, আমরা যুক্ত হয়েছি। স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং প্রত্যেক সপ্তাহে হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।”

বিএনপি নেতাকর্মী মামলা প্রত্যাহারের দাবি
গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির অন্যান্য নেতারা। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা এই কেসগুলোর তালিকা রেডি করে সরকারকে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা বর্তমান লিগ্যাল সিস্টেমে মুভ করছি। অলরেডি আমাদের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীর জামিন হয়েছে। তবে কেস উইথড্র হয়নি। তবে আমার বিরুদ্ধে যেসব কেসগুলো একেবারেই ফেক, সেগুলো প্রত্যাহার হোক। যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।”

‘চারটি বিষয়ে ন্যূনতম সংস্কার প্রয়োজনীয়’
মির্জা ফখরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আপনি একটি সংস্কারের রোডম্যাপ চেয়েছেন। কোন কোন সংস্কার হলে বিএনপি মনে করবে ‍‍‘গুড এনাফ?‍‍’ কোন কোন ক্ষেত্রে আপনারা সংস্কার চান? আপনারা ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সংস্কারগুলো সংসদে পাস করবেন কি?” তিনি জবাব দেন, “নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটাই নষ্ট হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একবারে নষ্ট হয়েছে। বিচার বিভাগ, যেটা রাষ্ট্রের জন্য সবচাইতে জরুরি, সেখানে দলীয়করণ চূড়ান্ত হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা খুব বেশি প্রয়োজন। অর্থনীতিতে বেসিক সমস্যা আছে, যদিও এর তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব না। কতগুলো ইমিডিয়েট পদক্ষেপ দরকার যাতে অর্থনীতি সচল থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমূল সংস্কার দরকার। সেটা দ্রুত হয়তো সম্ভব না, তবে শুরুটা করা দরকার। প্রধানত যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে চাই, সেগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিচার বিভাগ, এই চারটি বিষয়ে নূন্যতম যে সংস্কার সেটি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”

তারেকের দেশে ফেরা ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক প্রশ্ন করেছিলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে দলীয় কোনও সিদ্ধান্ত আছে কি না? কবে নাগাদ তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন?”

জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান সাহেবকে তো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতেই চাই। তিনি আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান। দ্বিতীয়ত তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা মনে করি ও বিশ্বাস করি সেগুলোর আইনি কোনও ভিত্তি নেই। পুরোপুরি বানোয়াট, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে। তার ফিরে আসা দেশের জন্য, দলের জন্য খুব প্রয়োজন।”

সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও কথা উঠেছিল। মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, “চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে বাইরে পাঠানোর কথা আপনারা বারবার বলেছেন, এখন তিনি মুক্ত, এ বিষয়ে দলের এখনকার চিন্তাভাবনা কী?”

জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে কাজ করছি। তার মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। একদিনে, বললেই তো চলে যাওয়া যায় না। তার যে শারীরিক অবস্থা তাতে তিনি ফ্লাই করতে পারবেন কি না, কোন দেশে যাবেন সেটাও এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। চেষ্টা হচ্ছে কত দ্রুত তাকে বিদেশে নেওয়া যায়। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তার শারীরীক অবস্থার ওপর।

Link copied!