আজ ১০ আগস্ট। মা-মাটি আর প্রেম-প্রকৃতির বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯২৪ সালের এইদিনে নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ডাক নাম লাল মিয়া। সার্টিফিকেট নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। রাজমিস্ত্রি বাবা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘঁষামাজা দেখে ছোটবেলা থেকেই ছবি আকাঁর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
১৯৩৪ সালের ঘটনা। মাত্র ১০ বছর বয়সে বিদ্যালয়ে পড়ার সময় নাজনীতিবিদ ড, শ্যামপ্রসাদ মুখার্জি নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ পরিদর্শনে আসেন। ওই সময় এস এম সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন। স্কেচটি দেখে তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। এর মাধ্যমেই শিল্পী সুলতানের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
১৯৪১ সালে এস এম সুলতান কলকাতা র্আট স্কুলে ভর্তি হন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চারশো প্রতিযোগীকে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ভেনাস মিলোর ছবি আঁকতে দেওয়া হয়। এস এম সুলতান ওই প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। তবে প্রচলিত রীতিনীতির ঘোরবিরোধী এই শিল্পী শেষ বর্ষে এসে আর্ট স্কুল ত্যাগ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময তিনি ইংরেজ ও মার্কিন সেনাদের ছবি এঁকে জীবন চালাতেন। একর্পযায়ে চলে যান কাশ্মীর। ১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়।
ভারত বিভক্তির পর এস এম সুলতান পাকিস্তানে যেয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ এর উদ্বোধন করেন।
১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তিনি আমেরিকা যান। ওই সময় নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, বোস্টন ও শিকাগোতে তার ১৭টি একক এবং ইউরোপের লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তার ছবির একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়।
এস এম সুলতানই প্রথম এশীয় যার আঁকা ছবি পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লী প্রমুখ খ্যাতিমান শিল্পীদের ছবির পাশে প্রদর্শিত হয়েছে।
এস এম সুলতান ছিলেন স্বাধীনচেতা ও ভবঘুরে প্রকৃতির। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী একজন আবেগি মানুষ তাই তিনি অস্বীকার করেছিলেন যান্ত্রিকতা পিষ্ট নগর ও নাগরিক জীবনকে।
১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’।
চিত্রাপাড়ের লালমিয়া শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার।
এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি পান ১৯৮৪ সালে।
বাংলাদেশের যে শিল্পীর ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে কদর রয়েছে, তিনি এস এম সুলতান। বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা আর্ট গ্যালারিতে যার চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে তার নাম এস এম সুলতান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যু হয় চিরকুমার এই বিশ্ব বরেণ্য শিল্পীর।