‘মাইয়া’য় মিলবে মাইয়া-পোলা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২, ০৬:২৭ পিএম

‘মাইয়া’য় মিলবে মাইয়া-পোলা!

বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ সময় পাল্টালেও সমাজ থেকে কুসংস্কারকে এখনও নির্বাসনে পাঠানো যায়নি। তবে সময় পাল্টানোর সাথে সাথে মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে সচেতনতা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বর্তমান প্রজন্ম অনেকটাই ‘ওপেন মাইন্ডেড’। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ কিছুই তারা মানে না, মানতে চায় না। ভালবাসার হলে যাকে খুশি প্রাণ খুলে ভালবাসছে বর্তমান প্রজন্ম, আবার সঙ্গী পরিবর্তনও করছে মনের মিল না হলে। এসবের সাথে সমাজের অন্যান্য দিক থেকেও সচেতন হচ্ছে। বর্তমানে বিয়ের আগেই সন্তানের সুস্থতার দিক বিবেচনা করে দেখে নেওয়া হচ্ছে। করিয়ে নেওয়া হচ্ছে থাইরয়েড টেস্ট।

এমনিভাবে এখন কোনো দম্পতির সন্তান ধারণে সমস্যা হলে তার দোষ শুধুমাত্র মহিলার হয় না। বরং চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বার করা হচ্ছে। মহিলা বা পুরুষ, উভয়ের সন্তানহীনতার নেপথ্যেই রয়েছে জীবনযাত্রায় অনিয়ম। খাদ্যাভ্যাসের জটিলতা, মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক-মানসিক চাপ। এ সবের প্রকোপেই এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, সন্তানধারণের জন্য যেমন সুস্থ স্বাভাবিক ডিম্বাশয় প্রয়োজন যাতে তৈরি হতে পারে উৎকৃষ্ট ডিম্বাণু, ঠিক তেমনই প্রয়োজন সুস্থ-সবল-সচল শুক্রাণু। যদি শুক্রাণুর মান কোনও কারণে খারাপ হয় অথবা শুক্রাশয় থেকে শুক্রাণু নির্গমনের পথ সুগম না হয়, তখন বন্ধ্যত্ব আসতে পারে।

সম্প্রতি চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রভূত উন্নতির বদৌলতে  অনেকেই বাবা-মা হওয়ার সাধ পূরণ করতে পারছেন। আইইউআই (ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন), ডিআই (ডোনার ইনসেমিনেশন), ইকসি (ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন) এবং টেসা (টেস্টিকুলার স্পার্ম অ্যাসপিরেশন)- কে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় অসাধারণ এক বিপ্লব বলা যায়। এ ছাড়াও রয়েছে বহুল প্রচলিত আইভিএফ পদ্ধতি। তবে এই সব পদ্ধতিগুলিই বেশ খরচসাপেক্ষ, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।

সূত্র অনুসারে, গত চার দশকে ৫০ লক্ষেরও বেশি শিশু টেস্টটিউবের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখছে। এমনকি বর্তমানে আগের চেয়ে সংখ্যায় বেশি মানুষ চিকিৎসা করাতে আসছেন বলে চিকিৎসার খরচও কমছে। কিন্তু আজও বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের চিকিৎসা বহু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের হাতের নাগালের বাইরে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানের একটি চমৎকার আবিষ্কার আশা জাগাচ্ছে মধ্যবিত্তদের মনে।

বিজ্ঞানীরা একপ্রকার প্রোটিন আবিষ্কার করেছেন যা শুক্রাণু-ডিম্বাণুর পুষ্টির পাশপাশি নিষেকের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবে। প্রোটিনটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘মাইয়া’।

গ্রিসের মাতৃত্বের দেবীর নাম অনুসারে এই প্রোটিনের নামকরণ করা হয়েছে।সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে গ্যামেট ফিউশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে গ্যামেট ফিউশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এক প্রকার প্রোটিন-৩ ধরনের রিসেপ্টার এফসি আবিষ্কার করেছেন। তা নিষেকের সময়ে ডিস্বাণু যে শুক্রণুর সাহায্যে নিষিক্ত হতে চাইছে, সেই শুক্রণুটির প্রোটিনের সঙ্গে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে। এই আবিষ্কারটি বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে প্রমাণিত হতে চলেছে।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য কমরস্কভা জানিয়েছেন, ’এটি প্রায় দু’দশকের গবেষণার ফলাফল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ প্রায় ১৭ টি অনুষঙ্গের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফলাফল হচ্ছে এই প্রকাশনা’।

এই গবেষণাটি প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়য়ে হ্যারি মুরের ল্যাবে শুরু হয়েছিল। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই পরীক্ষা করার জন্য তাঁদের নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এইপ্রকার প্রোটিন যেহেতু শুধুমাত্র মানুষের দেহেই পাওয়া যায় সেহেতু পরীক্ষা করার জন্য তাঁদের সম্মতি পেতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি গবেষণাটি পুরোপুরিই মানুষের শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উপরই করা হয়েছে।  

Link copied!