ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডদল নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে নিরাপদ সেক্স, এইচআইভি ও এইডস নিয়ে আলোচনার হাওয়া বেশ জোরেশোরেই পাল্টে দিয়েছিল।
আটলান্টার পুরষ্কার জয়ী ব্যান্ড টিএলসির এই দলে ছিল তিন সদস্য । তাঁরা হলেন- টিয়োনে “টি-বজ” ওয়াটকিন্স, লিসা “লেফট আই” লোপেজ ও রোজোন্ডা “চিলি” থমাস। ১৯৯৫ সালে এই ব্যান্ড তাদের ২য় অ্যালবাম ‘ক্রেজিসেক্সকুল’ – এর সিগনেচার গান ‘ওয়াটারফলস’ প্রকাশ করে।
ওয়ালটারফলস হল হালকা মিউজিকে আরঅ্যান্ডবি ও হিপহপের মিশেলে একটা গান, যেটা যৌথভাবে লিখেছিলেন গীতিকার মার্কুইজ এথরিজ ও প্রযোজক সংস্থা অর্গানাইজড নয়েজ, সাথে ছিলেন জেনিফার লোপেজ।
এই গানটি খুব দারুণভাবে টিএলসির তিন সদস্যের কণ্ঠের প্রতিভাকে কাজে লাগায়: ওয়াটকিন্সের একটু কর্কশ বর্ণনা, থমাসের মিষ্টি সুর; সঙ্গে লোপেজের চমৎকার ও অভিনব ছন্দ।
এটার মূল ভাবনা ছিল সচেতনতা-নিজেকে ধ্বংসের যে ইচ্ছা সেটার বিরুদ্ধে একটা সতর্কতা, আবার একই সাথে এর সুরটা ছিল সহানুভূতিশীল এবং কাউকে কোন কিছু দিয়ে বিচার করা নয়।
গানটির প্রথম অংশে একজন ‘নিঃসঙ্গ মা’ তার প্রিয় ছেলেকে মাদকের জগতে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে।
পরের অংশে আমরা একজন পুরুষের কথা শুনি যে ‘প্রাকৃতিক চাহিদা থেকে প্রলোভনে পরে’ অরক্ষিত যৌন মিলন করে এবং পরে কান্নাকাটি করে। ‘তিনটি বর্ণের শব্দ তাকে তার শেষ গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।’
২০১৮ সালে গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেন থমাস বলেন, ‘অরক্ষিত যৌন মিলন, বাছবিচারহীন এবং ভুল মানুষের সাথে চলাফেরার বিষয়ে আমাদের গানে একটা শক্ত বার্তা দিতে চেয়েছিলাম আমরা। ওয়াটারফলসের বার্তাটা সবার ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি মনে করি সেকারণেই এটি এখন পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে হিট গান।’
ওয়াটারফলসের এই চমকপ্রদ ও হৃদয়গ্রাহী অভিব্যক্তি টিএলসির জন্য ছিল খুবই স্বাভাবিক। এই তিনজন সবসময়ই নিরাপদ যৌন মিলন, যৌন মিলনের সুখ এসব নিয়ে ছিল সোচ্চার, যা তাদের মূলধারার স্রোতের বাইরেও উজ্জ্বল করে রেখেছিল।
টিএলসি তাদের গানে সবসময় নিষ্ঠুর ও বাস্তব সব সত্যকে তুলে এনেছে, যার মধ্যে একটা ছিল যে এইচআইভি সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকার মানুষদের আক্রান্ত করেছিল।
যে বছর ওয়াটারফলস প্রকাশ হয়, সে বছর যুক্তরাষ্ট্রে এইডসে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড পাবলিক সার্ভিসের প্রকাশিত এইচআইভি/এইডস সার্ভিলেন্স রিপোর্টে বলা হয়, ‘১৯৯৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক পুরুষ (৫৪ শতাংশ) ও নারীদের (৭৬ শতাংশ) মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইডস শনাক্ত হয়।’
পরের কয়েক দশকে এইচআইভির চিকিৎসার ব্যাপক উন্নতি হলেও, ওয়াটারফলস কখনোই তার আবেদন ও আবেগের শক্তি হারায়নি। এই গানটি আশির দশকে এইডসের বিষয়ে নানান রকম গুজব ও হোমোফোবিয়া থেকে মানুষের নজর এই বিষয়ে সচেতনতা ও নিরাপদ যৌন মিলনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।