ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১, ০৩:৩৮ পিএম
মডেল ও উপস্থাপনার আড়ালে তিনি একজন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী। বর্তমানে পড়াশুনা ও ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে ঘর আলো করে আসছে নতুন অতিথি। ব্যস্ততার ফাঁকে যত্ন নিচ্ছেন নিজেরও। বলছি প্রিয় মুখ পিয়া জান্নাতুলের কথা। দ্য রিপোর্টের সাক্ষাৎকার পর্বে কথা বলেন তিনি। আলাপে উঠে আসে তার জীবনের হাসি-কান্না, জীবন-যাপনসহ নানা জানা-অজানা বিষয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেরুবা শহীদ।
পিয়া জান্নাতুল: সাধারণত শুটিং থাকলে শুটিং করি। এদিকে নর্থ সাউথে ইএমবিএ করছি। এখন আমার সেকেন্ড সেমিস্টারের ক্লাস শেষে ফাইনাল এক্সাম বাকি আছে। আপনার সাথে কথা বলার আগে আমি সাইনমেন্ট করছিলাম। এছাড়া জিম করছি, বিভিন্ন বই পড়ছি। এই আরকি।
দ্য রিপোর্ট: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে উপস্থাপনা করেছেন। দেশের নারীরাও এখন ক্রিকেট খেলছেন। নারী ক্রিকেট দলের টুর্নামেন্টে আপনাকে উপস্থাপনায় দেখতে পাবো কিনা?
পিয়া জান্নাতুল: আমার কাছে এখনো পর্যন্ত নারী টুর্নামেন্টে উপস্থাপনা করার কোনো অফার আসেনি। যদি অফার আসে তাহলে অবশ্যই নারী ক্রিকেট দলের টুর্নামেন্টে উপস্থাপনা করার বিষয়টি ভেবে দেখতাম।
দ্য রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় খেলা টেনিস। দেশেটিতে নারী টেনিস প্লেয়ারদের সম্মান আকাশচুম্বী। বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। দেশে পুরুষ ক্রিকেটারদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হলেও নারী ক্রিকেটারা আশানুরূপ সম্মানটুকু পায় না। যদিও নারী ক্রিকেটাররাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফলতা এনে দিয়েছে। যেহেতু ক্রিকেট নিয়েই উপস্থাপনা করছেন তাই আপনার কাছে কি মনে হয়ে, এই বৈষম্যের কারণ কি ?
পিয়া জান্নাতুল: কোনো সংস্থাকে দোষ না দিয়ে যদি আমাদের দেশের মানুষের কথা বলা হয়। তাহলে আমার দেশের মানুষ ছেলেদের ক্রিকেট দেখতে বেশি পছন্দ করে। কারণ যুগে যুগে ছেলেরাই এ দেশে খেলে আসছে। নারীদের খেলা দেখার জন্য অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। আরেকটু গভীরে তাকানো গেলে, আমাদের দেশের মানুষ এখনও ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাদার জীবন আলাদা করতে পারছে না। সবকিছু একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। সবকিছুর মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত জীবন টেনে আনে, যা আমার মনে হয় একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। এগুলো একটু ঠিক করে নিলে মনে হয় ভালো। আর নিজেদের খেলা জনপ্রিয় করার জন্য যারা নারীরা রয়েছেন তাদের কেও এগিয়ে আসতে হবে। কীভাবে তাদের খেলা জনপ্রিয় করে তোলা যায় ও আরও ভালো খেলা যায় এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা মনে হয় তাদের একটা দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে গেছে।
এছাড়া আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের কমেন্ট সেকশনটি দেখেন। তখন দেখতে পারবেন, বেশিরভাগ মানুষ আসোলে কি চিন্তা-ভাবনা করছেন? মেয়েরা শার্ট- প্যান্ট পরে খেলছে, তারা স্বাধীনতা পাচ্ছে- এই ব্যাপারগুলো নিয়ে এখন আমাদের দেশের মানুষ খুব একটা অভ্যস্ত নয়। আমি উপস্থাপনা করি এটা নিয়েও আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।
দ্য রিপোর্ট: নানা সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনাকেও ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হতে হয়। যা খুব সহজে সামালও দিচ্ছেন। শোবিজের অনেকেই আছেন যারা এই বুলিংয়ের কারণে ভেঙে পড়েন। তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
পিয়া জান্নাতুল: আসলে প্রত্যেক মানুষই আলাদা। সবাই যে শক্ত মন-মানসিকতার হবে তাও না। সবাই যদি শক্ত মনের হতো তাহলে সুইসাইড হতো না। অনেক আছেন ভেঙে পড়েন না। তার মানে এই না, যিনি সুইসাইড করছেন তিনি ইচ্ছা করে করছেন। কারণ তারা সেরকম একটা ডিপ্রেশনের কারণেই এমন করছে। আমি বলবো, এই বিষয়গুলো সামাল দিতে হলে প্রচুর বই পড়তে হবে, জানতে হবে। মোটিভেশনাল বই পড়া যেতে পারে। নিজেও বই পড়ি। সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়াতে পড়ে না থেকে থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে কেমন লাগছে, বা কতটুকু সুন্দর লাগছে। এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
পিয়া সম্প্রতি বেবি বাম্পের এই সাহসী ছবি তোলেন।
দ্য রিপোর্ট: মডেল, রেস্টুরেন্ট বিজনেসম্যান ও এডভোকেট, আপনার একসঙ্গে তিন পেশা। এরইমধ্যে প্রেগনেন্সির সময়ও মডেলিং করছেন। এতো কিছু কিভাবে সামলান?
পিয়া জান্নাতুল: মাদারহুড বিষয়টা যে কোন মানুষের জন্য একটি বড় বিষয়। হোক ছেলেদের কিংবা মেয়েদের। এ সময় আমার হাজবেন্ড সবসময় পাশে থেকেছেন। ব্যালেন্স করে চলতে পারলে সব কাজেই সহজ। প্রায়োরিটি দেখে কাজটা করতে হবে। থেমে গেলে চলবে না। গায়েব হয়ে গেলে হবে না। এতে করে পিছিয়ে পড়তে হয়। সবকিছুই করতে হবে। ধীর গতিতে হলেও আগাতে হবে। এভাবে কাজ করি বলেই আমার খুব একটা সমস্যা হয় না বলে মনে হয়। আর কাজের ক্ষেতের ছোটবেলা যেটা ঠিক মনে করতাম। সেটা ঠিকই করতাম। এ ক্ষেত্রে আমি ছিলেম ঘাড় জেদি। যা আমার জন্য পজিটিভ হিসেবেও কাজ করেছে।
দ্য রিপোর্ট: কাজ ও প্রেগনেন্সির সময়, সব কিছু মিলিয়ে হাজবেন্ডের সহযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাই।
পিয়া জান্নাতুল: ফারুক সবসময়েই আমার পাশে থেকেছে। একজন ভালো হাজবেন্ড পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তাই নিজেকে লাকি মনে করি। যদি আমার হাজবেন্ডের কথা বলি তাহলে বলব, সে অবশ্যই খুব ভাল একটা ছেলে। ও যেটা করছে এটা খুব নরমাল। এটাই হওয়া উচিত। প্রেগনেন্সির সময় কিংবা যেকোনো সময়েই একটা ওয়াইফের পাশে একটা একটা হাজবেন্ড থাকবে এটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত। আমার মনে হয় এটাই নরমাল।
দ্য রিপোর্ট: এবার জানতে চাইবো নতুন অতিথির কি কোনো নাম ঠিক করেছেন কিনা?
পিয়া জান্নাতুল: হ্যাঁ ওর নাম রেখেছি। এরইমধ্যে ফেসবুকে জানিয়েছিও। যদিও আলাদাভাবে লিখিনি কিছু। আমি ওর নাম দিয়েছি অ্যারেছ হাসান।
দ্য রিপোর্ট: মিডিয়ার শুরুর দিকে এমন কোন কষ্টের ঘটনা আছে কিনা। যা মনে করে এখনো কষ্ট পান।
পিয়া জান্নাতুল: তখন আমার এইচএসসি পরীক্ষা চলছিল। সে সময় পরীক্ষার মাঝে ৩-৪ দিনের একটা ছুটি ছিলো। সেই ছুটিতে চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিই। তখন বাইরে গিয়ে কাজ করাটাও আমার জন্য কঠিন ছিল। কারণ মিডিয়াতে কাজ করায় বাবা আমার সাথে কথা বলতে না । আমি মিডিয়াতে কাজ করি, তা তিনি পছন্দ করতেন না। তো সেদিন চট্টগ্রামের শো শেষ করে লিফট দিয়ে নামার সময় একজন লোক আমাকে বলল, "আপনি কি মডেল ?" তখন আমি এটা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। প্রথম প্রথম কাজ করছিলাতো। তখন কেউ আমাকে মডেল বলে ডাকলে, খুব খুশি হতাম। তখন নতুন-নতুন কাজ করলে যা হয়, মডেল বললে খুব ভালো লাগতো। তো আমি তাকে উত্তরে বললাম, "হ্যাঁ আমি মডেল।" তখন তিনি আমাকে তার রুম নাম্বার দিয়ে জানান, তিনি এই হোটেলে উঠেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতেও বলেন। সেদিন তিনি আমাকে যা বললেন আমিও তা তখন বুঝিনি। এতটুকু বয়সে আর কিই বা বুঝবো। ঠিক কিছুক্ষণ পরে আমি যখন বিষয়টি বুঝতে পারি তখন খুবই মন খারাপ হয়েছিলো। এখন এভাবে কেউ বললে মাইর-টাইর দিয়ে দিতাম । কিন্তু ওই সময় একটা মানুষ এভাবে কাউকে অস্বস্তিকর কথা বলতে পারে। এটাই বুঝার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এখনো এ কথা মনে পড়লে অনেক কষ্ট হয়।
দ্য রিপোর্ট: পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায় মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্স কিংবা সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারাই পরবর্তীতে তাদের দেশের বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে দাপিয়ে কাজ করছেন। আপনিতো মিস বাংলাদেশ হয়েছিলেন। কিন্তু মডেলিং ও উপস্থাপনায় আপনাকে দেখা গেলেও, চলচ্চিত্রে সে পরিমাণ কাজ করতে দেখা যায় না। আগামীতে দেশের সিনেমায় আপনাকে দেখতে পাব কি না। এ নিয়ে ভাবনা কি ?
পিয়া জান্নাতুল: আমি সিনেমা, নাটক এবং উপস্থাপনাসহ সব মাধ্যমেই কাজ করেছি। সিনেমা যেহেতু সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সেখানে ডেডিকেশনটা একটু বেশি দরকার। কিন্তু সেই পরিমাণ ডেডিকেশনটা বা ধৈর্য বা ইচ্ছা বা প্যাশন যার কোনটাই আমার নেই মনে হয়। আমাদের চলচ্চিত্রে এখন যারা কাজ করছেন তাদের প্রচুর প্যাশন আছে বলেই হয়তো তারা কাজ করতে পারছেন। আমার যেহেতু অন্যান্য কাজের পরিধির সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এই যায়গাটাতে আমার সময়টাও কমে গেছে। আর বলিউডের কথা বলেতে গেলে, সেখানে অনেক বড় বড় কাজ হচ্ছে। বলিউডের কন্টেন্টও অনেক ভালো, প্রচুর সিনেমা হলও রয়েছে। সব মিলে তারা একটা জায়গায় চলে গিয়েছে। সেখানে তো ডেফিনিটলি প্রতিযোগীরা তাদের আগ্রহের জায়গা থেকে ভিড় জমাবেই। এখানে আরেকটা ব্যাপার, আমি যে মিডিয়ার কাজে খুব বেশি সময় দিই তা কিন্তু না। আমার মনে হয় মিডিয়াতে কাজ করার জন্য প্রচুর সময় দিতে হয়। আমাদের দেশে এখনো যারা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা শিল্পচর্চা করেন, তাদেরকে প্রপার রেস্পেক্ট এখনো দেওয়া হয় না। সেখানে আমার মনে হয় এখানে যতটুকু কাজ করা আমার জন্য সুইটেবল তত টুকু কাজ করছি। আর আমার দ্বারা মনে হয় পুরোটা সময় দেওয়া হবে না।
দ্য রিপোর্ট: ধন্যবাদ আপনাকে।
পিয়া জান্নাতুল: ধন্যবাদ আপনাকেও।