বাংলাদেশ নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডকে হারাল। আজ সেই ঐতিহাসিক জয়ের খবরটি উড়ে আসল তাসমান সাগরের তীরবর্তী দেশটি থেকে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে-ওভালে প্রথম টেস্টে ৮ উইকেটের জয়ে ২ টেস্টের সিরিজে ১-০ লিড নিল টাইগাররা। নিউজিল্যান্ড বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদেরই হারিয়ে দিল টাইগাররা। গত মৌসুমে তারা ভারতকে হারিয়ে এই শিরোপা জিতেছিল।
বাংলাদেশ ১৬.৫ ওভারে জয় পেয়ে গেল (৪২/২)। গ্যালারিতে বাংলাদেশের দর্শকরা হাজির ছিলেন। পতাকা হাতে দলের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা। মুশফিক জেমিসনের বলে ২ রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। তিনি ৫ ও মুমিনুল ১৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। এবাদত ম্যাচ সেরা হয়েছেন। ৭ উইকেট তার এ ম্যাচে।
৪০ রানের টার্গেট ছিল। সেটা কোনো বড় সমস্যা ছিল না। কারণ বাংলাদেশ খুব দ্রুতই অলআউট করে নিউজিল্যান্ডকে। লাঞ্চের সময়ে জয় চলে আসে। বাংলাদেশের সময়ে ভোর ৪টায় খেলা শুরু হয় প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের। যারা এখনো ঘুমিয়ে ছিলেন তারা হাতছাড়া করেছেন লাইভ ঐতিহাসিক এই ম্যাচ জয়ের কৃতিত্বটি।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও প্রথমবারের মত জিতল বাংলাদেশ। আজকের আগে এখানে কোনো ফরম্যাটে জয় ছিল না বাংলাদেশের। টেস্টে ১৬ বারের দেখায় প্রথম জয় পেল তারা। ঘরের মাঠের বাইরে শীর্ষ পাঁচে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে এটাই টাইগারদের প্রথম জয়। ঘরের বাইরে ৬১ টেস্টের মধ্যে এটি ৬ষ্ঠ জয়। ঘরের মাঠে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল কিউইরা। সেটা আজ ভেঙে গেল।
নিউজিল্যান্ড ১১ বছর পর উপমহাদেশের কোনো দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হেরে বসলো। আর সিরিজেও পিছিয়ে পড়লো তারা। কল্পনার বাইরে ছিল এই জয়। অবশ্য এখন আর স্বপ্ন মনে হচ্ছে না। কারণ জয় হাতের মুঠোয় ধরা দিয়েছে।
জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ড মাত্র ৪০ রানের টার্গেট দেয়। বাংলাদেশ ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে। ওপেনার সাদমান ৩ রানে টিম সাউদির শিকার হন। এরপর বাকি পথ নিরাপদে পাড়ি দেন মুমিনুল ও মুশফিক। শান্ত এর আগে ১৭ রানে হন জেমিসনের শিকার।
মাহমুদুল হাসান জয় আঙুলের চোটে ছিটকে গেছেন। ফলে তাকে ছাড়াই খেলতে হয়েছে। ওপেনিংয়ে এসেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান। সাদমান আউট হয়ে যান।
এর আগে ৫৫ মিনিটেই নিউজিল্যান্ডের সর্বশেষ ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড মাত্র ৩৯ রানের লিড পায়। আর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ীদের হারানোর সুযোগ পেয়ে যায় টাইগাররা।
গত ১১ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ নিউজিল্যান্ডে জেতেনি। তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবকে ছাড়াই মিশন সফল করে ফেললেন টাইগাররা।
গতকাল ছিল চতুর্থ দিনের খেলা। নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে দিন শেষ করে। টেলর ৩৭ ও রবিন্দ্র ৬ রানে খেলছিলেন। রস টেলরকে ৪০ রানে বোল্ড করেন এবাদত। আর প্রথমবারের মত টেস্টে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান। বাংলাদেশের কোনো পেসার ৯ বছর পেল ৫ উইকেট শিকারের স্বাদ। এরপর জেমিসনকেও আউট করেন তিনি। ৪৬ রানে নেন তিনি ৬ উইকেট।
তাসকিন রাচিন রবিন্দ্র (১৬) ও সাউদিকে আউট করেন। এই ইনিংসে ৩৬ রানে ৩ উইকেট তার।
এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ৩২৮ রান করেছিল। জবাবে বাংলাদেশ ৪৫৮ রান তোলে। ১৩০ রানের লিড প্রথম ইনিংসে। আর নিউজিল্যান্ড এই দ্বিতীয় ইনিংসে আজ ১৬৯ রানে অলআউট হয়।