মোহাম্মদ সিরাজ, এশিয়া কাপ ফাইনালে যিনি একাই বিধ্বস্ত করেছেন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১ ওভারের ৬ বলে, ৪ উইকেট নেওয়া একমাত্র বোলার সিরাজ। এশিয়া কাপের ফাইনালে মোট নিয়েছেন ৬ উইকেট। ভারতকে করেছেন এশিয়ার সেরা।
ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও উঠেছে মোহাম্মদ সিরাজের হাতে। পুরস্কার হিসেবে পাওয়া পুরো ৫ হাজার ডলার উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন শ্রীলঙ্কার গ্রাউন্ডসম্যানদের, যারা পুরো টুর্নামেন্টে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠ শুকিয়ে গেছেন প্রায় সব ম্যাচেই। সিরাজের এই ঘোষণাকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের দর্শকরা।
১৯৯৪ সালের ১৩ মার্চ অটোচালক মোহাম্মদ ঘাউস ও সংগ্রামী মা শাবানা বেগমের ঘরে জন্ম নেওয়া সিরাজের শৈশব খুব একটা ভালো কাটেনি, জীবন কেটেছে দারিদ্রের মধ্যে।
ক্রিকেটের নেশার জন্য মা বকাবকি করলেও হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন সিরাজের বাবা মোহম্মদ ঘাউস। ছেলের স্বপ্নপূরণের জন্য দিনভর কঠোর পরিশ্রম করতেন তিনি।
সিরাজের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৫ সালে। ঐ বছর হায়দ্রাবাদের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন তিনি। ঠিক পরের বছর রঞ্জি ট্রফিতে তিনিই ছিলেন হায়দ্রাবাদের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
এরপর বিজয় হাজারে টুর্নামেন্ট, ইন্ডিয়া ও বি দল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোহাম্মদ সিরাজের অভিষেক ঘটে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
যদিও অভিষেকের সে ম্যাচটি মধুর ছিল না সিরাজের জন্য। রাজকোটে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকে চার ওভারে দিয়েছিলেন ৫৭ রান।
সিরাজ প্রথম টেস্ট দলে সুযোগ পান ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারতের হয়ে সেবার মাঠে নামতে পারেননি তিনি।
ঠিক পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হলেও সে অভিজ্ঞতাও ছিল টি-২০ অভিষেকের মতোই তিক্ত।
এতকিছুর পরও ভারতীয় ক্রিকেট নির্বাচকরা আস্থা হারাননি এ ক্রিকেটারের উপর। সেই আস্থার প্রতিদানই যেন পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বার বার প্রমাণ করছেন মোহাম্মদ সিরাজ।
এমনই এক পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিতে হয়েছিল ২০২০ সালে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ পান তিনি।
কিছুটা দেরিতে সিডনিতে অনুশীলনের পর প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী ও অধিনায়ক বিরাট কোহালির কাছে বাবার মৃত্যুর খবর শোনেন সিরাজ। মৃত্যুর পর শেষবারের মত দেখতেও পারেননি বাবাকে। বাধ সাধে কোভিডের কোয়ারেন্টাইন নীতি। বাবার মৃত্যুর খবর শুনলেও প্রধান কোচ ও অধিনায়কের ভরসায় মনোবল হারাননি তিনি।
এমন কঠিন সময় তাঁর মা সাহস যুগিয়েছেন এবং বলেছেন, “তোর আব্বুর স্বপ্ন তোকে পূরণ করতে হবে”। বাবার স্বপ্নপূরণের পথেই তাঁর চলে যাওয়ার খবর জেনেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই অজিদের হারিয়ে ভারতের জয়ের অংশীদার হয়েছিলেন তিনি। সেবার প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ৫ উইকেট নেওয়ার এলিট বুকে নাম লেখান সিরাজ।
আর এখন ভারতকে দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক জয়।
ছোটবেলায় যে ছেলের ভাল জুতো কেনার সামর্থ্য ছিল না, সেই ছেলেটিই অতীত সাথে নিয়ে এখন আরও শক্ত করে বাঁধছেন দামি জুতোর ফিতে। ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর যেতে চান এই পেসার।