প্রায় এক দিনের অপেক্ষা , এরপর বন্ধু সাকিব তামিমের বিদায়ে আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘তোমার সাথে আর মাঠের মাঝখানে না থাকাটা অদ্ভুত হবে... কিন্তু যখন আমরা প্রতিটি লড়াইয়ে পা রাখব তখন তোমার আগুন আমাদের সবার ভিতরে জ্বলবে।’
ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্ন, কেন তামিমকে নিয়ে কিছু লিখতে এতটা সময় নিলেন সাকিব? হয়তো সাকিব ভেবেছিলেন অভিমানের পালা চুকিয়ে ফিরবেন তামিম, এই বুঝি বিসিবি ঘোষণা দিলো অভিমান ভেঙেছে , ফিরছেন মি. ক্যাপ্টেন। কিন্তু না, তামিম যে বড্ড একরোখা। বিদায়ের ঘোষণা দিয়েই যোগাযোগের বাইরে চলে গেলেন।
সাকিবও হয়তো বুঝে গেলেন আর সম্ভব নয় বন্ধুকে মাঠে ফেরানো। বিদায় বেলায় স্মরণ করলেন ২০০৩ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ তে একসাথে প্রথম পথ চলা এবং গত ২০ বছর ধরে তাদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্যগুলো একসাথে ভাগ করে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার কথা।
হুট করে তামিমের এমন অবসর, বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। তামিম এলেন, বিদায় নিলেন, কাঁদলেন, কোটি ভক্তদের কাঁদালেন। শুধু কি ভক্তদের? তামিমের বিদায়ে ব্যথিত হয়েছেন তাঁর সতীর্থরাও।
এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট মানে ছিল যে পঞ্চপান্ডবের রাজত্ব , সেই পান্ডবরা হারিয়ে যাচ্ছেন এক এক করে। দলে নেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লাল-সবুজের জার্সিটা আর গায়ে জড়ানো হচ্ছে না মাশরাফি বিন মর্তুজার। এবার অভিমানে সেই তালিকায় নাম লেখালেন তামিমও। মাঠে আছেন কেবল সাকিব-মুশফিক। এক সঙ্গে মাঠে না থাকলেও, লাল সবুজের জার্সিতে তাদের রয়েছে কতশত স্মৃতি।
তাইতো ফেসবুকে তামিমের বিদায় নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে দারুণ স্মৃতি ভাগাভাগি করেছি, সাফল্য উদযাপন করেছি। একসঙ্গে জিতেছি, কঠিন সময় কাটিয়েছি।’ মুশফিক আক্ষেপ করে বলেন, বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমরা আর একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করব না, আমাদের দেশকে জেতাব না।
এদিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘সব অবসরের সিদ্ধান্তই দুঃখজনক। আর তামিমের অবসরের সিদ্ধান্তে আমি হতবাক। এতবছর ধরে আমরা একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি, অজস্র স্মৃতি আছে আমাদের একত্রে।’
মাশরাফি তো অভিমানে, ক্ষোভে প্রশ্নই করে ফেললেন, ‘মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনো চাপ তোকে বাধ্য করেছে!’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাশরাফি বলেন , তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরের বার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।
তামিমের এক সময়ের সতীর্থ আশরাফুল তো ফেসবুক লাইভে চলে আসলেন। সম্পর্কটা এতটা গভীর যে বলে ফেললেন, ‘এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস তাঁর পুরনো। তবুও অবাক হয়েছি, তা সত্ত্বেও বলব সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মনে হয় না সে ফিরে আসবে।’
কথায় বলে নক্ষত্রেরও পতন হয় , আজ কিংবা কাল বিদায় তো অবধারিত। তবে তাই বলে তামিমের মত এক নক্ষত্রের এমন বিদায় কি প্রত্যাশিত ছিল? তামিমকে দর্শক ভর্তি গ্যালারিতে, বুকে জড়িয়ে, মাথা উঁচু করে বিদায় না দেয়ার আক্ষেপ রয়ে গেছে সতীর্থদের মাঝেও।