আবু সাঈদ চৌধুরী: দেশের কীর্তিমান সন্তান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম

আবু সাঈদ চৌধুরী: দেশের কীর্তিমান সন্তান

২৫ মার্চ কালরাত্রির সেই ভয়াবহ গণহত্যা, নারকীয়তা, বর্বরতায় শোক-দুঃখ-বিষাদে মুষড়ে না পড়ে ক্ষোভে জ্বলে ওঠে বাঙালি জাতি। শুরু হয় চিরকাঙ্ক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধ দেশে যেমন, তেমনি প্রবাসেও সার্থকভাবে পরিচালিত হয়েছে। প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কীর্তিমান সন্তান আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন একাধারে একজন সৎ বিচারক, সুযোগ্য অধ্যাপক, সুদক্ষ সংগঠক, মননশীল সম্পাদক। ছিলেন আইনবিদ ও শিক্ষাবিদ- সর্বোপরি মহান এক দেশপ্রেমী।

১৯২১ সালে টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ি গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তাকে খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করেছিল।

১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে দুই ছাত্র নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে ইস্তফা দেন আবু সাঈদ চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

আশির দশকে স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনেও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নিজ সহায়-সম্পত্তির একটি বড় অংশ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করে গেছেন।


৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে জেগে ওঠে বাংলাদেশ। এর পর ২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালরাত্রি। নির্মম এই গণহত্যার খবরে আবু সাঈদ চৌধুরী বিবিসির খবরে জানতে পারলেন, ঢাকা বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; গুরুতর কিছু ঘটেছে। তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, "... সাতাশে মার্চ শনিবার সকালে ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের বিবরণী এবং ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এরপর ভয়াবহ হত্যার কথা সবগুলো কাগজেই উল্লেখ করে। কেনেথ ক্লার্কের পাঠানো করাচি থেকে একটি রিপোর্ট থেকে বলা হয়, 'জিন্নার একতার স্বপ্ন রক্তে ধুয়ে-মুছে গেছে।' সেদিনকার লন্ডন টাইম্‌সে শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ঘোষণাটি তাঁর পক্ষ থেকে পাঠ করেন মেজর জিয়া। সে কথাও ওই দিনই ওই পত্রিকাতেই ছিল। সম্পাদকীয়তেও তারা যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। প্রায় সব কাগজই বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন ছাপে এবং ইয়াহিয়া খান কর্তৃক শেখ মুজিবকে দেশদ্রোহী ঘোষণার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে।"

লন্ডনে ঘাঁটি করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলতে আবু সাঈদ চৌধুরী মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি একাধারে যুক্তরাজ্যের নানা দলমতে বিভক্ত বাঙালিদের একতাবদ্ধ করেছিলেন। অন্যদিকে ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী বাঙালিদেরও একতাবদ্ধ করে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২৩ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত নিযুক্ত হন। এর পর ২৭ আগস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাস স্থাপন করে তিনি তাঁর পুরো অভিযানকেই একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক কাজে রূপ দেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরূপে বিচারপতি চৌধুরী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, পশ্চিম জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কে গিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য।

১০ জানুয়ারি দেশে আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে বিচারপতি চৌধুরী মাত্র ৫১ বছর বয়সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলেন।

Link copied!