আসছে মে-তে আবার হবে...!

সাদ্দাম হোসেন

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২১, ১০:৩৫ পিএম

আসছে মে-তে আবার হবে...!

বৈশ্বিক মহামারী করোনা অতিক্রমকালীন সময়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। উন্নয়ন ফি ৫০ ভাগ প্রত্যাহার, আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের কর্মপ্রয়াস আমরা অব্যাহত রেখেছি। হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণ করার একতরফা সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম এবং শিক্ষার্থীদের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান রেখেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা স্থগিত করেছিল।

৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গতকালকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তগুলোর কথা আমরা জেনেছি। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার আলোকে হল বন্ধ থাকা অবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণের সকল সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে বিসিএসসহ সরকারি চাকরির বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বয়স সমন্বয় করে বা বাড়িয়ে বয়সজনিত জটিলতার কারণে চাকরির আবেদন করতে না পারার সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক প্রয়াসের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এই সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানায়। একই সাথে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সেশনজট নিরসনে বা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীবান্ধব রোডম্যাপ ঘোষণা করে। যেসব শিক্ষার্থী ডিভাইস না থাকার কারণে বা আর্থিক অসহায়ত্বের কারণে অনলাইন শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় এখনো অংশ নিতে পারেনি, ইউজিসি এ ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যেন দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হয়- এ নিয়ে তদারকি প্রয়োজন।

শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে শিক্ষা ঋণ বা ফি মওকুফের মত বিষয়ও ভেবে দেখা যেতে পারে। ইতিমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্কুল খুললেই ১ কোটি ১০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য কিডস অ্যালাউন্সের যে ঘোষণা দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের হৃদয় স্পর্শ করেছে। বাংলাদেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থীদের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দূরদর্শী উদ্যোগ, শিক্ষক-কর্মচারীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টীকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনা এবং আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এর আওতায় নিয়ে আসার রুপকল্প করার জন্যও বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কৃতজ্ঞতা জানায়।

সকল ছাত্র সংগঠন, প্ল্যাটফর্ম বা জোটের কাছেও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছি। সকল বিষয় রাজপথে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য নয়, পলিসি পলিটিকসের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেও আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উন্নততর রাজনীতির চর্চা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আবেগের ঠিকাদারি করে কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে, এ ব্যাপারেও সোচ্চার থাকতে হবে। মিথ্যা, গুজব আর অভিনয়ের ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করে যারা ক্যাম্পাসগুলোকে রাজনীতির দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা অতীতে পরাজিত হয়েছে, আগামীতেও হবে।

আমরা জানি, শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ডভাবে ক্যাম্পাসকে অনুভব করছে, ক্লাস-খুনসুটি-আড্ডা-মিছিল, সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় তারুণ্যের উদযাপন, বন্ধুত্বের অকারণ অভিমানের স্বর্গীয় সময়গুলো বা চায়ের কাপে ঝড়, নাগরিক ক্লান্তিতে 'তোমাকে চাই' আলাপ, সবকিছুকেই। আমাদের অপেক্ষা দীর্ঘায়ত হচ্ছে এটি সত্য, কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক বাস্তবতার সমান্তরালে আমাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। আমাদের বিদ্যায়তনিক উদযাপন থেকে আমাদের আরো কটা দিনের বিচ্ছেদ আমাদের ফেরাকে, ক্যাম্পাসের জন্য, হলের জন্য আমাদের প্রেমকে স্থায়ীভাবেই আরো সুন্দর করবে। বরং বলা যেতে পারে,  আসছে মে -তে আবার হবে। এভাবেও ফিরে আসা যায়!

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। 
Link copied!