ট্রুডোকে কেন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে হল

সোহেল তারেক

জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

ট্রুডোকে কেন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে হল

ছবি: সংগৃহীত

টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকেও ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

এদিকে ট্রুডোর সরে দাঁড়ানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘কানাডার এখন উচিত যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হয়ে একীভূত হয়ে যাওয়া।

কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে একীভূত হলে, বাণিজ্যের জন্য কানাডাকে আর অতিরিক্ত মাসূল গুণতে হবে না বলেও তিনি জানান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে ট্রাম্প এও বলেছিলেন যে, ‘কানাডার জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। এটি ট্রুডো জানে বলেই, সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এর আগে ট্রাম্প কানাডার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মাসুল বসানোর হুমকি দিয়েছেন, যা করা হলে কানাডার অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়তে পারে।  

যদিও এটা পরিস্কার যে, আগামী ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেবেন, তখন ট্রুডোই কানাডার প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। 

দেশটিতে পার্লামেন্টের পরের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মার্চের পরে। সেই পর্যন্ত ট্রুডোই দেশটির প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।

ট্রুডোর সরে দাঁড়ানোর কারণ কী

ট্রুডো কেবল কানাডাতেই নয়, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক নেতা। ট্রাম্পের এমন ঘোষণা ও পরবর্তীতে ট্রুডোর সরে দাঁড়ানোর ফলে রাজনীতিতে এক ধরণের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কেন হঠাত করে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন –এ নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

জানা গেছে, নিজের দলের পার্লামেন্ট সদস্যরাই চাইছিলেন ট্রুডো ইস্তফা দিন। জনমত সমীক্ষায় বলা হচ্ছিল, এই বছরের শেষে যে নির্বাচন হওয়ার কথা আছে, তাতে লিবারেল পার্টি খুব খারাপ ফল করবে।

ট্রুডো বলেছেন, “আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমায় যদি দলে অভ্যন্তরীণ লড়াই লড়তে হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে লড়ার জন্য আমি সেরা বিকল্প হতে পারি না। দেশকে তাদের সেরা নেতা বাছার একটা সুযোগ দেয়া দরকার।” 

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন ট্রুডো, এরপর কী হবে?  

পরপর দুই বার লিবারেল পার্টি তার নেতৃত্বে নির্বাচনে জিতেছে। মানুষ তাকে দেখে ভোট দিয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া ও আবাসন সংকটই তার প্রধান কারণ।

২০০৯ থেকে ট্রুডো সংখ্যালঘু সরকার চালাচ্ছেন। গত ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রী ও তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড আর্থিক নীতি নিয়ে মতপার্থক্যের জেরে ইস্তফা দেন। এই ঘটনা তার অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

এরপর কী হবে?

ট্রুডোর পর কে হতে পারেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে বেশ কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ট্রুডোর সরকারের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, পরিবহনমন্ত্রী অনিতা আনন্দ এবং কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মার্ক কারনির নাম বেশ আলোচনায় রয়েছেন।

এদিকে জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিরোধী রক্ষণশীলরা পরের নির্বাচনে জিততে পারে। এক্ষেত্রে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পিয়ার পলিয়েভর।

জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তার বাবা পিয়েরে ট্রুডোও ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০০০ সালে পিয়েরে ট্রুডো মারা গেলে ক্রমশ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ট্রুডো।

২০০৮ সালে মন্ট্রিয়লের পাপিনিউ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির প্রধান নেতা নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১১ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হন একই এলাকা থেকে।

এরপর ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন জাস্টিন ট্রুডো। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একজন প্রধানমন্ত্রী হন যার বাবাও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

আয়রনি হলো- ১৯৮৪ সালে তার বাবা পিয়েরে ট্রুডোকেও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ ৪০ বছর পর জাস্টিন ট্রুডোকেও সরে দাঁড়াতে হলো।

Link copied!