ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৭, ২০২২, ০৪:৩৮ এএম

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ?

ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। বরং পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘাতের তীব্রতা বাড়ছে। সম্প্রতি পুরো ইউক্রেন জুড়ে মিসাইল তাণ্ডব চালায় রাশিয়া। অন্যদিকে, ইউক্রেনও ছাড় দিতে নারাজ।তাদের সেনাবাহিনীও রুশদের কাছ থেকে বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রুশদের বিরুদ্ধে সরাসরি না জড়ালেও ইউক্রেনকে ভারী যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির নেতৃত্বাধীন উত্তর আটলান্টিক সামরিক নিরাপত্তা জোট-ন্যাটো।

সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রুশদের দখলে থাকা ইউক্রেনের চার অঞ্চল এখন তাদের নিজেদের ভূমি। তাই এসব অঞ্চলে হামলা মানেই রাশিয়ার ওপর হামলা। আর এ হামলার জবাব দিতে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগেরও হুমকি দেন। তার এই হুমকির জবাবে মার্কিন প্রশাসন বলছে, ইউক্রেনকে বাঁচাতে সব ধরণের চেষ্টা করা হবে। এমতাবস্থায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা জেগেছে অনেকের মনে।

রাশিয়া-ইউক্রেনের এই যুদ্ধ নিয়ে পোপ ফ্রান্সিস সম্প্রতি বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এরই মধ্যে চলছে, যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংঘাতে কাজ করা ‘উপাদান’ এর প্রমাণ।

পোপ ফ্রান্সিসের বক্তব্যের মতোই ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? যুক্তরাজ্যের এক্সপ্রেস ইউকে পত্রিকা বিশ্বযুদ্ধের ট্যাগও চালু করেছে।

এবার আলোচনায় আসা যাক, বিশ্বযুদ্ধ কী? বিশ্বযুদ্ধ বলতে আমরা বুঝি, যে যুদ্ধে পুরো বিশ্বের সব দেশ কিংবা অধিকাংশ দেশ জড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধ হয়েছে দুটি। সে ক্ষেত্রে ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধকে বিশ্বযুদ্ধ বলার সুযোগ নেই। যদিও দুই দেশের কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।

আরেকটি বিষয় হলো- বিশ্বে সংঘটিত আগের দুটি বিশ্বযুদ্ধই হয়েছে ইউরোপে এবং  দুই দেশের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর শুরু। অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ ও তার স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি যুদ্ধ শুরু করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ রূপ নেয়। ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর সময়ও। ওই সময় জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করলে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এই যে, আগের দুটি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে জড়াতে চায়নি। পরিস্থিতি দেশটিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মেক্সিকোগামী আন্তর্জাতিক জাহাজে জার্মান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

ফলে আর নিরপেক্ষতা থাকতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন।  ১৯১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রিয়া ও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও। যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে জার্মানির মিত্র জাপানের আক্রমণের ফলে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ভারী যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরকে গুলি করে, তবে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। একই কারণে সামরিক জোট ন্যাটোও  রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে যুক্ত হতে চাইছে না।

তবে ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ রাশিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হলে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে জাড়িয়ে পড়বে ন্যাটো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, ন্যাটোর নীতিমালায় বলা হয়েছে- সদস্যভুক্ত কোনো রাষ্ট্র বাইরের কোনো রাষ্ট্রের দ্বারা হামলার শিকার হলে ন্যাটো সম্মিলিতভাবে এর জবাব দেবে। তবে ইউক্রেন নাটোর সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র নয়। সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে। সদস্য পদ পেতে এখনও অনেক সময় লাগবে।

সম্প্রতি মিসাইল হামলায় আবারও দ্রুত ন্যাটোর সদস্য করে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলিনস্কি। তবে ন্যাটো সাড়া না দিলেও হামলা প্রতিরোধে অত্যাধুণিক যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করছে। এতে নাখোস পুতিন প্রশাসন। যুদ্ধাস্ত্র দেওয়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকিও দিয়েছে মস্কো। আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি যে পারমাণবিক যুদ্ধ, তাও বেশ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ।

 

বিশ্ববাসী আশঙ্কা করলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখন পর্যন্ত মোটেও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়। যেভাবে যুদ্ধের পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে, যেভাবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগর হুমকি-ধামকি বাড়ছে তাতে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সবার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। তবে ইউক্রেনে রুশ হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু কিনা তা এখনও বলার সময় আসেনি।

 

লেখক: সাংবাদিক

Link copied!