একজন অপরাজিতা অনন্যা শেখ হাসিনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২, ০৩:১১ এএম

একজন অপরাজিতা অনন্যা শেখ হাসিনা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এক রাতের মধ্যে ঘাতকের দল কেড়ে নিয়েছে তাঁর পরিবারের সকলকে। দেশের সবচেয়ে সেরা পরিবার ছিল সেটি। নিজের পরিবারের নারকীয় ওই হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি ছিলেন বিদেশ-বিভূঁইয়ে। নির্বাসনের সেই দিনগুলোতে ঘাতকের বুলেট সেখানেও তাঁকে তাড়া করেছে। বাবা-মা স্বজনহারা সেই নারীই প্রবল মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে ধ্বংসস্তুপ থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছেন। নিজের জন্য, নিজের দেশের জন্য। এবং তিনি শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন। স্বার্থক হয়েছেন তাঁর লক্ষ্যে। কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে দাবায়ে রাখতে পারেনি। তিনি শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবের কন্যা। তিনি অপরাজিতা। তিনি অনন্যা।

শেখ হাসিনার এই সংগ্রাম শুধু তাঁরই নয়, এ দেশের সকল মানুষের কাছে এক উজ্জীবনী আখ্যান। বিশেষ করে নারীদের জন্য ত তিনি সংগ্রামের এক আলোকবর্তিকা। পাহাড়সমান বাধা কীভাবে ডিঙাতে হয়, তা জানতে দূরদেশের মনীষীদের জীবনদর্শন নয়, একজন শেখ হাসিনার জীবনবৃত্তান্ত জানলেই চলে। তিনি নিজেই যে সংগ্রামের এক ইতিহাস।

ছাত্রাবস্থা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদী এক চরিত্র তিনি। একইসাথে তিনি শান্তির বারতা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। সবার সাথে মিত্রতা, কারো সাথেই শত্রুতা নয়— এটাই তাঁর নীতি।

একজন রাজনৈতিক নেতা কিংবা সরকার প্রধান হিসেবে তিনি অনন্য বহুসংখ্যক রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল যেটি কিনা এ দেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দলের কাণ্ডারি হিসেবে আছেন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। বিশ্বে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নেতাদের মধ্যে তিনি শীর্ষস্থানীয়।

এত যে ক্ষমতার কেন্দ্রে তাঁর অবস্থান, তারপরও তিনি একজন সাধারণ বাঙালি নারী হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেন সর্বত্র। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তিনি ভাষণ দেন নিজের ভাষা বাঙলায়। সেই ভাষণে তিনি যেমন নিজের দেশের অর্জন তুলে ধরেন, তেমনি বিশ্বসংকটের সমাধানেরও ডাক দেন। সেখানে তিনি একজন বিশ্ব নেতার মতোই নিজেকে তুলে ধরেন।

রাজনৈতিক সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করেও তিনি অতি সাধারণ এক জীবনযাপনকে বেছে নিয়েছেন। যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে গেছেন, তাঁর সারল্যে মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের এই গুণটি ছিল। তিনি সেই গুণটিই রপ্ত করে চলেছেন দিনের পর দিন। মানুষকে ভালবাসার প্রতিদানও তিনি পেয়েছেন। তাঁর ওপর গ্রেনেড হামলাসহ নানা সময়ে হামলা হয়েছে। কর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়ে তাঁকে বাঁচিয়েছেন। বাংলাদেশ ত বটেই, বিশ্ব ইতিহাসে এমন নজীর খুব একটা দেখা যায় না। লক্ষণীয় যে, একজন নেতা কতটা প্রিয় হলে তাঁর কর্মীরা এভাবে নিজেদের প্রাণপাত করতে পারেন! এটি থেকেই বুঝা যায় তিনি কতটা জনপ্রিয়।

এই স্বাধীন দেশের বয়স পাঁচ দশক। স্বাধীনতা লাভের পর দেশ যখন ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে, সেই সময়ই জাতির স্থপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। এরপর ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশ স্বৈরশাসকের অধীনে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তখন। গণতন্ত্র ছিল সবার কল্পনারও বাইরে। সেই কালো অধ্যায় দূর করতে আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে একজন শেখ হাসিনা আলোর মশাল জ্বালানোর ডাক দেন। শুরু হয় গণতন্ত্রের লক্ষ্যে দুর্বার আন্দোলন।

স্বৈরশাসকের প্রস্থান ঘটে। গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রা শুরু করে দেশ।

এককালে যে দেশের মানুষ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতো, সেই দেশ এখন সমৃদ্ধির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বনেতারা উদাহরন টানেন বাংলাদেশের! পদ্মা সেতু থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তর; এসব কিছুই এখন বিশ্বপরিসরে তুমুল আলোচনার এক বিষয়। অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন যেমনটা বলছেন, 'সামাজিক-অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে।' অনেকে বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারত থেকেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে।

এই যে এতসব অগ্রগতি, এর পেছনে একজন শেখ হাসিনার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব এবং দুরদর্শী বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। ফলে বিশ্বনেতারাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন উন্নয়নের রোল মডেলকে অনুকরণীয় হিসেবে অন্যদের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ওই যে দ্যাখো, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও ওইভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এই যে নিজেকে একটি উদাহরন হিসেবে তৈরি করা, এটি একজন নেতার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই যে গণমানুষের ভালবাসা, এটিই একজন নেতার জীবনের সবচেয়ে কাঙ্খিত চাওয়া। শেখ হাসিনা চাওয়া এবং পাওয়া দুটিই অর্জন করে নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে তিনি। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত টুঙ্গিপাড়ায়। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

লেখক: সম্পাদক, দ্য রিপোর্ট

 

Link copied!