চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২, ২০২১, ০৭:৪৮ পিএম

চোখ রাঙাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর চোখ রাঙাচ্ছে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পর ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জুন মাসে দেশে শনাক্তের হার ১২ শতাংশ হলেও শুক্রবার তা ২৮ শতাংশ হয়েছে। তাই বিভিন্ন কারখানা সচল রেখে লকডাউনের মাধ্যমে তৃতীয় ঢেউ রোধ করা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

সর্বাত্মক লকডাউনের দাবি

দেশে পোশাক খাতে প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। যাদের মূল অংশই ঢাকা,নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরে অবস্থিত। আলাদা পরিবহন ব্যবস্থার কথা থাকলেও অধিকাংশই নিজ নিজ অবস্থান থেকে যাতায়াত করছে। যার ফলে চলাচল দ্রুতই রোধ করা যাচ্ছে না। তাই করোনা মোকাবেলায় অন্তত দুই সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পরিচালক (গবেষণা) খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৫ লাখ শ্রমিক শুধু রাজধানীর আশেপাশেই চলাচল করছে নিয়মিত। চাইলেই এটা পূর্ণ লকডাউন বলা যায়না। আর সম্প্রতি পোশাক খাতে অর্ডারের পরিমান বাড়ছে। তাই ব্যবসায় মন্দা এটা বলারও সুযোগ নেই। তাই সর্বাত্মক লকডাউনে গেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দরিদ্র মানুষের ঘরে খাবার পৌছে দিতে না পারলে তাদের ঘরে বন্দি করে রাখা যাবে না। যার ফলে লকডাউনের কার্যকরিতাও হারাচ্ছে। কয়েকদফা লকডাউন করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সকলের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে সর্বাত্মক লকডাউন দেয়া জরুরী।

জনস্বাস্থ্যবিদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনা সংক্রমণের গতিবিধি অনুসারে বলা যায় তৃতীয় ঢেউ ঘটে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, কোভিড পরীক্ষা বাড়ানো ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের অন্যদের থেকে আলাদা করার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে হয়। এটা সমন্বয় না করা গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

গত এপ্রিল মাসে মাত্র একদিন নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। বাকি ২৯ দিনই সংক্রমণের হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ সংক্রমণের হারও দেখা গেছে এই মাসে। সার্বিক ভাবে এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। এই মাসে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭টি। সে হিসাবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মৃত্যুর হার দেড়শ ছুঁই ছুঁই

বৃহস্পতিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। তবে শুক্রবার মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, বরিশাল বিভাগ কিছুটা জায়গায় আছে। তাছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি আছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো, সেটি নির্ভর করবে বিদ্যমান যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে, সে অনুপাতে রোগীর সংখ্যার ওপর।

Link copied!