তিনদিক থেকে আক্রান্ত কিয়েভ, প্রবল প্রতিরোধ, দেশ ছাড়ছে দলে দলে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২, ১১:০০ এএম

তিনদিক থেকে আক্রান্ত কিয়েভ, প্রবল প্রতিরোধ, দেশ ছাড়ছে দলে দলে

হামলার চতুর্থ দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। গতকাল শনিবার প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় মেলিতোপোল শহর দখলে নেওয়ার দাবি করেছেন রুশ সেনারা। তবে রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহরে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ইউক্রেনের সেনারা।

বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেনীয়দের অনেকেই হামলাকারী রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন। দেশটিতে চতুর্থ দিন রবিবারও  কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। কামানের গোলা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি।

আরও পড়তে পারেন: পোল্যান্ড, ফ্রান্সের পর এবার ইউক্রেনে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে জার্মানি

বিশ্বের প্রবল চাপ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দেশে দেশে বিক্ষোভ, নিষেধাজ্ঞার বোঝা উপেক্ষা করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে নিতে অনড় রাশিয়া।  দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার বাহিনীকে হামলা চালিয়ে যেতে বলেছেন। পুতিনের নির্দেশে এ পর্যন্ত আড়াইশর বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হেনেছে রুশরা।

আরও পড়তে পারেন: ইউক্রেনের অর্থ সহায়তায় আরও ৩৫ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

তবে যেমনটি আশঙ্কা ছিল, কয়েক ঘণ্টায় কিয়েভের পতন হবে, তা হয়নি। উল্টো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল শনিবার দাবি করেছেন, পুতিনের পরিকল্পনা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। অনেক রুশ সেনা গ্রেপ্তার হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, প্রবল প্রতিরোধের মুখে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে রুশ বাহিনী। যদিও এসব দাবির পক্ষে নিরপেক্ষ তথ্যপ্রমাণ নেই।

রাজধানী কিয়েভে বেসামরিক ভবনে রুশ বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেন অভিযোগ করেছে। এতে হতাহতও হয়েছে বলে জানায় জেলেনস্কি সরকার। তবে কিয়েভের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো।  ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়ার হামলায় ১৯৮ জন বেসামরিক ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন। তবে প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন হাজার ৫০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি ইউক্রেনের।

রাজধানী জুড়ে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানীতে থাকা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে এই অবস্থা বেশি দিন নাও চলতে পারে। কিয়েভের পতন হতে পারে। এরই মধ্যে গুজন ছড়িয়েছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শহর ছেড়ে আত্মগোপনে গেছেন। মস্কোর পক্ষেও বলা হয়েছে জেলেনস্কি আর কিয়েভে নেই, পালিয়েছেন। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ইউক্রেন ছেড়ে চলে আসার পরামর্শ দিয়েছিল। মস্কোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলেনস্কির কিয়েভের থাকার বিষয়টি আরও ঘোলোটে হয়ে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার  কিয়েভের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় বলিষ্ঠ কণ্ঠে জেলেনস্কি তার দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর প্রতি রাশিয়াকে প্রতিহতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।তবে এটি আগে রেকর্ড করা বলে দোবি করেছে পুতিন প্রশাসন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় কিয়েভের পতন হতে পারে। গতকাল শনিবার ক্রেমলিন দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের ৮০০ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এ দিন তাদের হাতে পতন হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নগরী মেলিটোপোলের। অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় ক্রুজ মিসাইল হামলা চালানো হচ্ছে।

এদিকে, রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ। প্রতি মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ছে। জরুরি উদ্ধারকারী বাস-ট্রেনে করে জীবন বাঁচাতে কিয়েভ ছাড়ছে মানুষ। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী হতে পারে।

Link copied!