সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১, ১১:৫৯ পিএম
জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে। অঙ্গীকারের চেয়েও কম কার্বন নিঃসরণ করতে উন্নত প্রযুক্তি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করবে বাংলাদেশ। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুও তুলে ধরা হবে। ৭৬ তম এই অধিবেশনে জাতীয় ও যৌথভাবে এ বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজের গতি ত্বরান্বিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উন্নত প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তার প্রাপ্তির আবেদন
বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্বালানি পোড়ানোর কারণে আগামী ৯ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪১ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হবে যা জলবায়ুকে পরিবর্তন করবে মারাত্মকভাবে। এর মধ্যে শর্তহীনভাবে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টন কার্বন কমানোর অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ।
তবে উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা পেলে সোয়া ৬ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে। সব মিলে যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৯ কোটি টন। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেও জোর তৎপরতা চালাবে বাংলাদেশ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট সেলের পরিচালক মির্জা শওকত আলী জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গত হওয়া মোট ৪১ কোটি টন কার্বনের মধ্যে নিঃশর্ত এবং শর্ত সাপেক্ষে প্রায় নয় কোটি টন নিঃসরণ কমাতে পারবে বাংলাদেশ, যা মোট নিঃসরিত কার্বনের প্রায় ২২ শতাংশ। এজন্য কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আবেদন করা হবে।
বাস্তুচ্যুত হবে দুই কোটি মানুষ
জাতিসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। পাশাপাশি দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারেন বলে আশঙ্কা জাতিসংঘের।
পরিবেশগত দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুতর এক সমস্যা। এই অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে- ২০১৯ সালে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও ফিলিপাইন এই অঞ্চলের সব দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে; বিশ্বের মোট ৭০ শতাংশের সমান। গত মাসে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছে।
২১ সেপ্টম্বর বৈঠকে অংশগ্রহণ
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের সময় ২১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানাবেন।
জলবায়ু ও টিকা প্রদানে জোর প্রদান
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের জলবায়ু ও করোনা টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে আলোচনা হবে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে, তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টার কথাও বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনি গুতেরেস আগামী বছরের প্রথমার্ধের মধ্যে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষের টিকাদান শেষ করতে একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে টিকার যে ৫৭০ কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আফ্রিকা পেয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহ বাড়াতে আগামী বুধবার ওয়াশিংটন থেকে বাইডেন বিশ্বনেতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন।