নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় তিন বছরের কার্যক্রমকালে কর্মরত ১৭ জন রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্র‚য়ারি পর্যন্ত ১২ দিনেই ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। তবে ১২ দিনের মধ্যে এই ৫ জনের মৃত্যু নিছক কাকতালীয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে। মৃতদের বেশিরভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস, লকডাউন এবং নিঃসঙ্গতাকে কেউ কেউ মৃত্যুর কারণ হিসেবে মনে করছেন।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ ১২ দিনে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে কাকতালীয় বলে মনে করছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাক্সিম শাকিরভ নামের এক রুশ নাগরিক মারা যান। সে রাতে তিনি তার ফ্ল্যাটে ঘুমিয়েছিলেন, সকালে আর ওঠেননি। ২৬ জানুয়ারি মৃতদেহ উদ্ধার করে জানা যায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
২৮ জানুয়ারি আলেক্সেই বারচেনকা অসুস্থবোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার আলেক্সেইকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হলেও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য রাজশাহী পাঠানো হয়েছে। ৫ জানুয়ারি আরো ২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ভিয়াচেস্লাভ তলমাচেভ পা পিছলে ১৪ তলা ভবন থেকে নিচে পড়ে যান। এটি নিছক দুর্ঘটনা বলে ওসি দাবি করেন।
আরেক জন পাভেল চুকিন পরিবারসহ রূপপুর কেন্দ্রে বাস করতেন। দীর্ঘদিন তার হার্টের সমস্যা ছিল। সর্বশেষ আলেক্সান্দার ভারোতনিকভ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি নিয়মিত ভেষজ জাতীয় ওষুধ খেতেন। ওসি জানান, ভেষজ ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রকল্পে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত কারণে কয়েক জনের মৃত্যু ঘটেছে এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও মৃতদের তালিকায় রয়েছেন।
ওসি আরো বলেন, পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসব বিদেশিরা নিঃসঙ্গভাবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। করেনা পরিস্থিতির কারণে এদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগে বাইরে বের হলেও এখন তাদের হাটবাজারেও যেতে দেওয়া হয় না।
সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শারমিন স্বপ্না বলেন, পোস্টমর্টেমের পর ভিসেরা রিপোর্টের জন্য রাজশাহীতে নমুনা পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, রাশিয়ানরা শীতপ্রধান দেশের মানুষ। জলবায়ুর তারতম্যের সঙ্গে খাদ্যভ্যাসেরও বিষয়ও রয়েছে। শীতপ্রধান দেশে যে ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা হয়, সে ধরনের খাবার এখানে গ্রহণ করলে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলাফেরায় বিধিনিষেধের কারণে এখন রাশিয়ানরা গৃহবন্দি জীবনযাপন করছেন। আগে স্থানীয় স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট ও পাকশী রিসোর্টে সুইমিং পুলে সাঁতারকাটা এবং বেড়ানোর জন্য তাদের অবাধ যাতায়াত থাকলেও এখন বিধিনিষেধ আরোপ করায় একেবারেই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
সহানুভূতি প্রকাশ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মৃতু্যবরণকারী রুশ এমপ্লয়িদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় করপোরেশন রসাটম এর প্রকৌশল শাখা জেএসসি এতমস্ত্রয়এক্সপোর্ট। রসাটম প্রেরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সর্বদা এমপ্লয়িদের আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচনা করি এবং তাদের জীবন ও কল্যাণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
রসাটম জানায়, সম্প্রতি স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে এসব মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী এসব ঘটনার পেছনে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে প্রতিটি মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করতে তদন্ত পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে আমরা সম্ভাব্য সব সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ জাতীয় দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় ও বিদেশি সব পার্টনার, স্টেকহোল্ডার, স্বাস্হ্যসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।