ফলাফল জিপিএ ৫, অথচ বাড়িতে কান্নার রোল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ৩০, ২০২১, ০৫:০৬ পিএম

ফলাফল জিপিএ ৫, অথচ বাড়িতে কান্নার রোল

১৫ বছরে সাফিয়ার লাশ যখন কবরে নামানো হচ্ছিল, তখন তার বাবা শফিকুল ইসলাম সবার সামনেই চোখ মুছছিলেন। নিজ হাতে কন্যার খাটিয়া বহন করে কবর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন। কন্যার কবরে নামার সাহস হয়নি তার। কন্যার অভাব তাকে কতোটা পোড়াচ্ছিল সেটা কেবল তাকে দেখলেই বুঝা যেত। বাড়ির ভেতরে বারবার শোকে মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা মরিয়ম খাতুন।

কেন? কারণটা তাদের যক্ষের ধন সাফিয়া সিলভী যে পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার পর এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ ৫ পেয়েছে। ভালো ফলাফল করায় আজ তার পরিবারের সদস্যদের মিষ্টি বিতরণের কথা। অথচ বাড়িজুড়ে কান্নার রোল। কারণ, সুখবরটা সাফিয়া শুনে যেতে পারেনি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক দিন পরই মারা গেছে সিলভী।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পুরান তাহেরপুর গ্রামের সাফিয়ার (১৫) বাবা শফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী ও মা মরিয়ম খাতুন স্কুলশিক্ষক। বিয়ের ১৬ বছর পর এই দম্পতির কোলজুড়ে আসে সাফিয়া।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার ৩ দিন আগে সাফিয়া অসুস্থ হয়ে যায়। এক বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। অসুস্থ হওয়ার পরও সাফিয়া পরীক্ষা দিতে চায়। তাই অসুস্থ অবস্থায়ই পরীক্ষায় অংশ নেয় সাফিয়া। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচারের জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ২৭ নভেম্বর অস্ত্রোপচারেই আগেই সে মারা যায়।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) এসএসসির ফল প্রকাশের পর জানা যায়, সাফিয়া সব কটি বিষয়েই এ প্লাস পেয়েছে।

সাফিয়ার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, সাফিয়া তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। তাদের মেয়ে লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল। সাফিয়াকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। অসুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও সাফিয়া এত ভালো ফলাফল করেছে। এ ফলাফল তাঁদের আবারও কাঁদাল।

সাফিয়ার শিক্ষক ও মামা জাকিরুল ইসলাম বলেন, সাফিয়া অকালে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছে। সাফিয়ার ভালো ফলাফল করে শহরের ভালো কলেজে লেখাপড়ার আগ্রহ ছিল। আজ সবই স্মৃতি।

Link copied!