হায়েনার পথ ধরে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৪, ২০২১, ০২:৪৪ এএম

হায়েনার পথ ধরে হারিয়ে গেছে ৩১ প্রজাতির প্রাণী

বাঘ তো বটেই, বনের রাজা সিংহও যার ভয়ে তটস্ত থাকে তার নাম হল হায়েনা। এই হায়েনা মানুষের মত অট্টহাসি হাসতে পারে। তবে ওই হাসিতে এক ধরণের বিভৎসতা থাকে। ফলে মানুষজন বহুকাল ধরে মন্দ অর্থে ‘হায়েনার হাসি’ শব্দযুগল ব্যবহার করে আসছে। হায়েনার নাম মন্দ অর্থে ব্যবহার হলেও তার বহু ইতিবাচক দিকও আছে। হায়েনা কখনো হাল ছাড়ে না। সে দলবদ্ধ চলাফেরা করে। হায়েনার বড় একটি বৈশিষ্ট হলো, সে কাউকে ভয় পায় না। এসব ইতিবাচক ‍গুণ অনেক মানুষের মধ্যেও নেই।  

Nekre
নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ধূসর নেকড়ে সেই কবেই বিদায় নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

লোভ আর হিংস্রতা বোঝাতে একদা যে প্রাণীটির উদাহরণ দেওয়া হতো, সেই হায়েনা আমাদের দেশের রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকার ঊষর লাল মাটিতে উনিশ শতকের শেষের দিকেও ঘুরে বেড়াতো সগৌরবে। ধূসর রঙের ওই হায়েনার দল এখন কেবলই স্মৃতি। এখন বরেন্দ্র তো বটেই, বাংলাদেশের কোথাও হায়েনার দেখা মেলে না। এক সময় এ দেশে গন্ডারও ছিল। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে এরকম ৩১ প্রজাতিরও বেশি প্রাণী।

হায়েনার পথ ধরে নেকড়ে, গন্ডার, বান্টিংসহ বহু প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে গেছে। এই প্রাণীগুলো এখন কেবলই স্মৃতি।

২০১৫ সালের দিকে বাংলাদেশের প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির বন্য প্রাণীর কী অবস্থা ও কীভাবে বেঁচে আছে সে-বিষয়ে একটি রেড লিস্টের হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ও সরকারের বন বিভাগের যৌথ উদ্দেগ্যে ওই প্রতিবেদনটি করা হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৩৯০টি বন্য প্রাণী বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ২৬৬ প্রজাতির মাছ, ২২ প্রজাতির উভচর, ১০৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮৮ প্রজাতির পাখি, ও ১১০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, গত ১৫ বছরে পাখি প্রজাতি সবচেয়ে বেশি বিলুপ্ত হয়েছে। দেশের ৫৬৬ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৯টি গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির দৌঁড়ে দ্বিতীয় অবস্থান স্তন্যপায়ী প্রাণীদের। ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী হারিয়ে গেছে এই সময়ে। আর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে একটি।

Nilgai
দিনাজপুর-পঞ্চগড়ের নীলগাই এখন অতীত স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেদনে উঠে আসে মহাবিপন্ন প্রাণী ৫৬টি, বিপন্ন ১৮১টি এবং ঝুঁকিতে আছে ১৫৩টি প্রজাতি। আর ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে ৯০ প্রজাতির প্রাণী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমাদের বনাঞ্চলগুলো ধ্বংস করে বিভিন্ন উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এই একেকটা বনাঞ্চলে রয়েছে একেক প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। সেদিকে কারো কোন ধরনের অবকাশ আবাস নেই। যার ফলে আমরা খুব দ্রুত বন্যপ্রাণীগুলো হারাচ্ছি।

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম রাজশাহী অঞ্চলের ডোরাকাটা হায়েনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ধূসর নেকড়ে, দিনাজপুর-পঞ্চগড়ের নীলগাই, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনগরু এবং বনমহিষ। এ ছাড়া তিন ধরনের গন্ডার সময়ের স্রোতে বিলীণ। সুমাত্রা গন্ডার, জাভা গন্ডার ও ভারতীয় গন্ডার গেছে অজানার পথে। শিঙা হরিণ, কৃষ্ণষাঁড় এবং মন্থর হরিণ গায়েব! এই ১১ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে বেশির ভাগই গত শতাব্দীতেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে জানা যায়।

এছাড়া মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতাবাঘ, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভালুক।

পরিবেশের বিপর্যয়, বাসস্থান সংকট ও বাসস্থান ধ্বংস হওয়ার কারণেই বণ্যপ্রাণীগুলো বিপন্ন অবস্থায় পড়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, গত ৫-১০ বছরে আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নগুলোর সাথে আমাদের যে ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে চলার কথা ছিলো সেগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে বা নিজস্ব তাগিদে করা হচ্ছে না। উন্নয়ন বা নগরায়নের কারণে প্রচুর পরিমানে বণ ও ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে বন্যপ্রাণীগুলো বিপন্ন অবস্থায় পরে গেছে। এ থেকে উত্তরণ ঘটানো এবং বিরলপ্রজ প্রাণীগুলো সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।

Link copied!