রাজধানীতে ক্রমেই বাড়ছে কিশোর অপরাধ। কিশোর গ্যাং উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী।একসময় কিশোর গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্যই ছিল ছিন্নমূল ও বস্তিবাসী। র্বতমানে তাদের পাশাপাশি যোগ হয়েছে মধ্যবিও চাকুরিজীবি পরিবারের সন্তানেরা। এদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনেকের মধ্যে আবার মাদক বিক্রি, জমি দখল, এমনকি হত্যা মামলাও রয়েছে।
গত ২২ মার্চ রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, শেরেবাংলা নগর ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’য়ের ৪৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মো. ফজলুল হক বলেন, “ ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় কিশোর গ্যাং চক্রটিকে তারা নজরদারিতে আনেন। গ্রেফতার হওয়া কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্য কিছুদিন ধরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই ৪৩ জন স্বীকার করেছে, তারা সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্য। ঢাকার জনবিরল এমনকি জনসমাগমপূর্ণ স্থানেও এই কিশোররা পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে আশপাশের কেউ বুঝে ওঠার আগেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানিব্যাগ, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল হ্যান্ডসেট, ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিত।”
শুধু তাই নয়, স্থানীয় ভূমিদস্যুদের পক্ষে দখলি জমিতে গিয়ে পেশিশক্তির মহড়া প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্য। চক্রের সদস্যরা নিজেদের গ্রুপের আধিপত্য বজায় রাখতে অন্য কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে মারামারিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলেও জানান র্যাব-২ এর এই কর্মকর্তা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী মিরপুরে নারী ছিনতাই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্তান কোলে নিয়ে তারা ঘুরে ঘুরে কৌশলে ছিনতাই করতেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চুরি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্য একাধিক হত্যা মামলার আসামি। ২০১৯ সালে স্কুলে বাচ্চাকে র্ভতি করাতে গিয়ে ছেলাধরা সন্দহে রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার আসামীদের মধ্য ১৯জনই ছিলেন কিশোর।
অন্যদিকে, রাজধানীর দয়াগন্জে মায়ের ব্যাগ ছিনতাইকালে কোল থেকে শিশু আরাফাত হত্যা মামলার ছিনতাইকারীও ছিলেন একজন কিশোর।
রাজনৈতিক পেশিশক্তির ঢাল ও মাদক কারবারের স্বার্থে কিশোর অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংগত কারণে কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতা ও মাদক কারবারি। তবে কিশোর অপরাধ রুখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তালিকাভুক্ত করা হয়েছে থানাভিত্তিক কিশোর গ্যাং লিডার, সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর জিয়া রহমান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এসব অপরাধে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনা থেকে জরুরি হলো তারা কেন এসব অপরাধে বারবার জড়িয়ে পড়ছে তাঁর কারণগুলো খুঁজে বের করার পর তার সমাধান করা “
আন্তর্জাতিক অপরাধবিজ্ঞান সোসাইটির (আইএসসি) এই পরিচালক মনে করেন, মাদকের সহজলভ্যতা,সোশ্যাল এনগেজমেন্ট না থাকা, পরিবারের সাথে দূরত্ব, রাজধানীতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাব, বিনোদনের সুব্যবস্থা থাকায় এসব কিশোর অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।