প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। সোমবার কলকাতার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদারের বরাত দিয়ে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার জানায়, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের কেবিনে রাখা হয়েছিল সমরেশ মজুমদারকে। তবে শনিবারই বিকেলে তাঁকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা পরের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন বলেছিলেন। তার মধ্যেই ঘটে গেল অঘটন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি স্ট্রোক (multiple right-sided হয়েছিল তাঁর। এছাড়াও বালবার পালসিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এর কারণেই ফুসফুস বিকল হয়ে যায় তাঁর। এছাড়া দীর্ঘ দিন সিওপিডি, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং myasthenia gravis-এর মতো সমস্যাও ছিল তাঁর। সব ক’টি সমস্যা একসঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতি ডেকে আনে। সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় তাঁর জীবনাবসান হয়।
‘ছাইটা হলো স্মৃতি, আগুনটা হলো বর্তমান’ অথবা ‘পৃথিবীর নিয়ম বড় অদ্ভুত, যাকে তুমি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসো সেই তোমার দু:খের কারণ হবে।’ কিংবা, ‘মেয়েরা গণেশের মত, মা দূর্গার চারপাশে পাক দিয়ে যে জগত দেখে তাতেই তৃপ্তি আর পুরুষরা কার্তিকের মত সারা পৃথিবী ঘুরে আসে অথচ কি দেখে তা তারাই জানে না।’ —এরকম হাজারো বাণীর স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার গল্প দিয়ে লেখালেখি শুরু করেন।
গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প “অন্যমাত্রা” লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে।
দু্ই বাংলার খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের প্রথম উপন্যাসের নাম ‘দৌঁড়’। কথা সাহিত্যের ট্রিলজি নামে পরিচিত ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘উত্তরাধিকার’ সমরেশ মজুমদারকে দুই বাংলার পাঠকদের মাঝে এনে দিয়েছেন খ্যাতির শীর্ষ চূড়া।
কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজন হিসেবে পাঠকমন জয় করেছেন সমরেশ মজুমদার। অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকারের ঝুলিতে জমা হয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড।