প্রতি বছর ২১ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব সংগীত দিবস। এই দিনটি শুধু সংগীতপ্রেমীদের জন্য নয়, বরং প্রতিটি মানুষের জন্য এক অনন্য উপলক্ষ, কারণ সংগীত এমন এক ভাষা—যা কোনও দেশ, জাতি বা ভাষার সীমারেখায় বাঁধা নয়।
বিশ্ব সংগীত দিবসের সূচনা ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে, ‘ফেতে দে লা মিউজিক’ (Fête de la Musique) নামে। উদ্দেশ্য ছিল, সংগীতকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে তোলা। সেই থেকেই এই দিনটি বিশ্বের নানা দেশে উন্মুক্ত কনসার্ট, রাস্তার পারফর্ম্যান্স ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয়ে আসছে।
এই দিনে পেশাদার এবং অপেশাদার শিল্পীদের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। যে কেউ নিজের সুর আর গানের মাধ্যমে নিজের গল্প বলতে পারে, দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেতে পারে। সংগীতের এই অবাধ প্রবাহ বিশ্ব সংগীত দিবসের মূল সৌন্দর্য। এখানে সংগীতের দাম নেই, এখানে আছে শুধু ভালোবাসা আর মুগ্ধতা।
বাংলাদেশেও এখন এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। ঢাকার নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগীত একাডেমি এ দিন উপলক্ষে আয়োজন করে উন্মুক্ত সংগীতানুষ্ঠান, লোকগানের আসর, কর্মশালা এবং তরুণ শিল্পীদের অংশগ্রহণে ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান। এ দিনটি নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংগীত ঐতিহ্যকে তুলে ধরার এক দারুণ সুযোগ। লালন, রবীন্দ্রনাথ, হাসন রাজার গান থেকে শুরু করে আধুনিক ব্যান্ড সংগীত—সব ধারা একসঙ্গে মিশে যায় এই দিনে।
বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে সংগীতের পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। ইউটিউব, স্পটিফাই, ফেসবুকের মতো মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ শিল্পীর গানও পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশ্ব সংগীত দিবসে তাই এখন অফলাইন আর অনলাইনের সীমানা মিলেমিশে এক হয়ে গেছে।
বিশ্ব সংগীত দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভাষা, জাতি বা সংস্কৃতি যাই হোক না কেন, সুরের টানেই আমরা সবাই এক। সংগীত কেবল বিনোদন নয়, এটি ভালোবাসার, প্রতিবাদের, আশার এবং মানবিকতার এক শক্তিশালী মাধ্যম। সংগীতের এই বন্ধনই বিশ্ব সংগীত দিবসের আসল বার্তা। এটি একদিনের উৎসব হলেও সংগীতের শক্তি আমাদের জীবন জুড়ে প্রতিদিনই বিরাজমান।