মডেল বানানো ও ভিডিওর মাধ্যমে আয়ের সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও নারী পাচার করছে একটি চক্র। আর এই অপকর্মের প্রধান মাধ্যম হিসেবে টিকটক ও লাইকি ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র বিভিন্ন দেশে নারী পাচারকরত বলেও পুলিশ সূত্র জানায়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ, ভয়ভীতির মাধ্যমে টাকা আদায়ও করা হত। তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
ভারতে নির্যাতনকারীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ মে) হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা। প্রায় এক বছর ধরে নিখোঁজ থাকা মেয়েকে ভিডিও দেখে শনাক্তেন পর মামলা দায়ের করেন তিনি।
ভারতে আটককৃত বাংলাদেশি নারী নির্যাতনকারীরা।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ভারতের ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে মামলা হলেও দেশে এটার বিচারকার্য চালাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভিন্ন দেশেই এই চক্র সক্রিয়ভাবে নারী পাচার করছে তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।
ভারতে টিকটকের ব্লু টিকের ফাঁদ
টিকটকের ক্ষেত্রে ভিডিও থেকে আয় করতে ব্লু ব্যাজ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেটি বাংলাদেশ থেকে সক্রিয় করা যায়না। যার ফলে বাংলাদেশের অনেকেই ভারত গিয়ে সক্রিয় করে আসে। এর ফলে আয় ও ফলোয়ার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরই প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে উঠতি নারী টিকটকারদের নিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় আইনশঙ্খলাবাহিনীর একটি সূত্র।
ভারতে গিয়ে টিকটক সক্রিয় করা প্রয়োজন হয়।
দেশেও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হত
ভারত ও দুবাইতে পাচার করা ছাড়াও দেশেও টিকটকার ও লাইকি ব্যবহারকারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হত। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর দেওয়ান রসুল হৃদয়কে চার ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। টিকটক ও লাইকির মাধ্যমে অভিনয়ের আশ্বাস দেখিয়ে তার নিজস্ব বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করত। পরে তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন ভয় দেখান হত।
টিকটকের মাধ্যমে নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত দেওয়ান রসুল হৃদয়।
বিভিন্ন গ্রুপ পার্টির মাধ্যমে প্রলোভন দেখান হয়
টিকটকা ও লাইকি ব্যবহারকারীরা গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করে। সেখানে উঠতি তরুনীদের আমন্ত্রণ জানান হয়। পরবর্তীতে টিকটকের শুটিং করে দেয়ার কথা বলে তাদের আটকে রেখে ধর্ষণ করা হত। এছাড়া নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনে কাজ করানোর কথা বলেও নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলত একটি চক্র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে গ্রুপ খুলে টিকটকারদের নিয়ে ঢাকার পাশের একটি জেলায় পুলপার্টির আয়োজন করা হয়। ওই পার্টিতে প্রায় ৭০০-৮০০ তরুণ-তরুণী অংশ নেন। এ গ্রুপ থেকেই নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে পাচার করা হয়।
ভারতের ওই তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে এ চক্রের মাধ্যমে আরও অনেক তরুণীকে পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত না হলেও এটি নেহাত কম নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মানবপাচারে জড়িতরা ভারতে গেছে অবৈধ পন্থায়
নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের পর ভারতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচিত হয়। পরে ভারতীয় পুলিশ দ্রুততম সময়ে তাদের গ্রেফতার করে। ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধারসহ মূল অভিযুক্ত টিকটক হৃদয় এবং আরও চারজনকে গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া গেছে। যারা প্রত্যেকেই অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাছে ভিসা কিংবা পাসপোর্ট কিছুই ছিল না।