মে ২০, ২০২২, ১০:২৪ পিএম
প্রায় দশ বছর ধরে বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামীরা বিদেশে পলাতক আছেন। তাদের এখন দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য ইন্টারপোল ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে চিঠিও পাঠাবে সংস্থাটি।
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন গ্রুপের এমডি
জালিয়াতির মাধ্যমে জনতাসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাচার করে বিসমিল্লাহ গ্রুপ। এ কারণে ২০১২ সাল থেকে গ্রুপটির এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার চৌধুরী সপরিবারে পলাতক আছেন। অর্থ পাচারে দুদকের মামলায় সোলেমান আনোয়ারসহ ৯ জনের ১০ বছর করে কারাদণ্ডও হয়েছে। আসামিদের দেশে ফেরাতে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশনাও দিয়েছে আদালত। তবে রেড এলার্ট জারির দুই বছরেও তাদের ফেরত আনায় কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।
সম্প্রতি পি কে হালদারকে ভারতে আটকের পর দুদক অন্যান্য অপরাধীদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের দুজন কমিশনার বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ শুরু করে।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডিসহ সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা পলাতক রয়েছেন। দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে যে, তারা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে রয়েছে। সেজন্যই যথাযথ নিয়ম মেনেই তাঁদেরকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া সচল করা হচ্ছে।
আলম খান আরও বলেন, শুধু বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামীদের নয় বরং অন্যান্য দুর্নীতির মামলায় পলাতক সকলকে ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
১২ শ কোটি টাকা আত্মসাৎ
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র বলছে, ব্যাংকিং খাতের আরেক আর্থিক কেলেঙ্কারি বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১২ মামলায় ৫৪ জনকে আসামি করে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন বলা হয়, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে মোট ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ফান্ডেড দায় (স্বীকৃত বিলের বিপরীতে) ৯৯০ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং ননফান্ডেড অর্থের পরিমাণ ১৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
আত্মসাৎকৃত টাকায় ঋণ প্রদানের চেষ্টা
দুদকের করা ১২টি মামলার সব কটিতেই বিসমিল্লাহ গ্রুপের পরিচালক খাজা সোলেমান চৌধুরী আসামি। তিনি ২০১২ সাল থেকে সপরিবারে পলাতক। পলাতক অবস্থায় দুবাই থেকে তিনি জালিয়াতির টাকায় ঋণ ব্যবস্থা সচল করার উদ্যোগ নেন।
বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ চেয়ে গত ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট ও ২০ অক্টোবর জনতা ব্যাংকের এমডির কাছে আবেদন করেন খাজা সোলেমান আনোয়ার। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে তারা বিদেশে থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন নির্বাহীদের জাল-জালিয়াতি, রপ্তানি আদেশ বাতিল ও অভ্যন্তরীণ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এখন রপ্তানি কার্যক্রম চালু, ৪ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান ও ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য তিনি ঋণ নিয়মিত করতে চান। এ জন্য আরোপিত সুদের ৫০ শতাংশ এবং অনারোপিত সুদের শতভাগ মওকুফ, এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের আবেদন করেন।
পাচার করা অর্থ থেকে বিদেশে জনতা ব্যাংকের হিসাবে ১২ কোটি টাকা ডাউন পেমেন্ট দিয়েছেন সোলেমান আনোয়ার। কিন্তু পরবর্তীতে এই কার্যক্রম আটকে যায়।