ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১০, ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে উপদেষ্টা পরিষদে চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়’-এর মিশন স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সেদিন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “ইউএনওএইচসিএইচআরের হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের একটা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

“উনাদের সঙ্গে আমাদের সরকারের আলোচনা চলছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটা অফিস বাংলাদেশে হবে এ আলোচনা চলছিল। আজ এর একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।”

আসিফ নজরুল সেদিন বলেছিলেন, খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা ভলকার তুর্ককে পাঠানো হবে।

“দ্রুততম সময়ের মধ্যে এমওইউটা সাইন হবে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একটা অফিস হবে।”

পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষ মনে করলে কার্যালয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে পারবে বলেও জানিয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেছিলেন, “আগামী দিনে দেশে যদি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের দেশের পাশাপাশি তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তবে সরকারের এই উদ্যোগে ‘গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বলেছে, বাংলাদেশে তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেবে না।

এ সংগঠনের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গত ৫ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে ‘হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা’ করেছে।

“এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।”

এদিকে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকলে (ওপি-সিএটি) বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশনের’ একটি পরিপূরক প্রটোকল হল এর ঐচ্ছিক প্রটোকল, যা জাতিসংঘের আওতাধীন। প্রটোকলটি ২০০২ সালে গৃহীত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলবিশ্বব্যাপী নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার করা।

“বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের এই মূল কনভেনশনে পক্ষভুক্ত হয়। সম্প্রতি, জাতিসংঘের ‘নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রটোকল-এ বাংলাদেশ পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।”

একই মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রস্তাবে মালয়েশিয়ার জোহর বাহরু-তে বাংলাদেশের নূতন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে।

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

এছাড়া ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-সাপেক্ষে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

Link copied!