কার্গো ভিলেজের আগুনে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি: ইএবি

ইউএনবি

অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম

কার্গো ভিলেজের আগুনে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি: ইএবি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ‘এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ইএবি)।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ড শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। নিরাপত্তাজনিত অব্যবস্থাপনার দায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টম হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস—কেউই এড়াতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘কার্গো ভিলেজের মালিক সিএএবি, কাস্টমস তত্ত্বাবধায়ক, আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও কেউই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এই ব্যর্থতাই আজকের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ।’

কার্গো ভিলেজে বহু বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখা হয়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই এবং চুরির ঘটনাও ঘটে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।’

হাতেম আরও বলেন, ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অটো ফায়ার ডিটেকশন ও প্রটেকশন সিস্টেম না থাকা, ফায়ার সার্ভিসের বিলম্বে পৌঁছানো এবং আগুনের দ্রুত বিস্তার—সবই প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রমাণ।’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ড কি কেবলই দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত? দায় কার, তা জনগণ জানতে চায়। সরকারকে অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত শুরু করতে হবে।’

ইএবি সভাপতি বলেন, ‘সম্প্রতি আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো শিল্পখাতে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ধারাবাহিকতা উদ্বেগজনক এবং আমাদের রপ্তানিকারকদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলছে।’

ইএবির তথ্য অনুযায়ী, কার্গো ভিলেজ তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, ফলমূল, ইলেকট্রনিক্স ও বিভিন্ন পচনশীল পণ্য রপ্তানিকারকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

আগুনে পোশাক শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কৃষিপণ্যের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অংশ পুড়ে যাওয়ায় ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল সংরক্ষণের সংকট দেখা দিয়েছে।

তার আশঙ্কা, এই ঘটনায় রপ্তানি আদেশ বিলম্বিত হওয়ায় ক্রেতাদের আস্থা কমবে, বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইএবি মনে করে, সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন জরুরি। এই কমিশন কেবল দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন করবে না, বরং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিজিএপিএমইএ, লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস, ফ্রোজেন ফুড, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক, জুয়েলারি, হস্তশিল্প, ফলমূল ও শাকসবজি রফতানিকারক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!