নভেম্বর ১১, ২০২৪, ০৮:৫৩ পিএম
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন সেখ বশির উদ্দিন। শপথের পরই ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন আকিজ বশির গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফেসবুকে একটি হত্যা মামলার আসামিদের নামের তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের আন্দোলনে নিহত ওই ছাত্রহত্যার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন সেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি।
নতুন উপদেষ্টাই জুলাইয়ের আন্দোলনে হত্যকাণ্ডের আসামি কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে নিশ্চিত নিশ্চিত নন, উপদেষ্টা নিজেই। পুলিশও বলছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবেন। আর মামলার আসামিদের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি বাদী স্বয়ং।
নতুন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়া সেখ বশির উদ্দিন দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিনের সন্তান। আকিজ উদ্দিনের আরেক সন্তান হলেন শেখ আফিল উদ্দিন। শেখ আফিল ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত একাধিকবারের সংসদ সদস্য।
যে হত্যা মামলা নিয়ে এতো আলোচনা, সেই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র–জনতার আন্দোলনে নির্বিচার গুলি চালায়। তখন সোহান শাহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। গত ২৪ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এরপর গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর রামপুরা থানায় ওই মামলা রেকর্ড করা হয়। এতে মোট ৫৭ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে।
নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে, ৪৯ নম্বর তালিকায় রয়েছেন শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। তাকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাবার নাম লেখা হয়েছে শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
মামলার ৪৮ নম্বরে আসামি হিসেবে রয়েছেন, শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া। তার পরিচয় দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য, যশোর-১। বাবার নামও শেখ আকিজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
কিন্তু নতুন উপদেষ্টা সেখ বশিরই এই মামলার আসামি কিনা, তা অবশ্য এখনো নিশ্চিত না। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি হলো আকিজ। সেখ আকিজের ছেলেদের মধ্যে সেখ আফিল উদ্দিন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নামটি আংশিকভাবে মিলে যায় উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। এমনকি সেখ বশিরের বাবার নামের সঙ্গে, আসামি তালিকায় থাকা ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার বাবার নামেরও আংশিক মিল রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নাম দিয়ে সেখ বশির উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে কিনা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন নিজেও। তিনি বলেছেন, নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি থাকলেও তিনি নিশ্চিত নন যে, মামলাটি তাঁর নামেই হয়েছে কি না। মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমি খুব ভালো জানি না। আমাদের লিগ্যাল টিম বিষয়টি দেখছে। মামলায় আমার নামের, আবার বাবার নামের কিছু সংগতি আছে, কিছু অসংগতি আছে। এটা আসলেই আমি কি না, তা নিশ্চিত নই। নিশ্চিত হলে লিগ্যালি ফেস (আইনিভাবে মোকাবিলা) করা হবে।
আর মামলার বাদী নিহত সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। আসামি কারা করেছে, তা আমি বলতে পারবো না। কারা নাম দিয়েছে, তা–ও তিনি জানেন না।
আরও পড়ুনঃ শপথ নিলেন নতুন ৩ উপদেষ্টা
সোহান শাহ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
এই মামলায় নাম থাকা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, তা প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল পুলিশের কাছে। জবাবে রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ বলেছেন, শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া বর্তমান মাননীয় উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন কি না, সেটি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।