আগস্ট ১৫, ২০২৩, ০১:৩৯ পিএম
ভোররাতে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আবারও প্রমাণ করেছে তাদের চরিত্র পাল্টায়নি। এমতাবস্থায় নাশকতার আশঙ্কায় বুধবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীতে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এসব কথা বলেন।
মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার সমর্থক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও পেড়ানোর বিষয়টি গনমাধ্যমকে অবহিত করতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমপি।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদী সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা যান।
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সাঈদীর দুই ছেলে তাদের বাবার মরদেহ পিরোজপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুরু থেকেই পুলিশের কাছে অনুরোধ করে আসছিলেন।পুলিশও সেভাবে প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা করছিল। কিন্তু পরে তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে জামায়াত এবং তার আত্মীয় স্বজনরা তাণ্ডব চালিয়েছে।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা দেখছিলাম জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছে তাদের নেতার শেষযাত্রায় অংশ নিতে। আর সাঈদীর পরিবার ও সন্তানরা আমাদের সাথে ছিলেন। সাঈদীর পরিবার আশ্বাস্ত করেছিলেন; কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু তাদের কথা রাখতে পারেনি,নেতা কর্মীরা জামায়াতের নেতাকর্মীরা যে তৎপরতা শুরু করে তাতে মনে হচ্ছিলো তারা বিএসএমএমইউ দখল করে নিবে। সেখানে অনেক রোগী রয়েছেন। রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ায় বাধ্য হয়ে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
খন্দকার গোলাম ফারুক আরও বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ সময় ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় ও গাড়ি ভাংচুর করে। আগুনে পুড়িয়ে দেয় দুটি মোটরসাইকেল।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, “বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনে জানাজার নামাজ আদায়ের জন্য আমরা অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা মানেনি। পরে ফজরের নামাজের পরে আবারও জানাজার নামাজের অনুমতি দেওয়া হয়। সেটিও তারা মানেনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে অত্যন্ত সীমিত আকারে তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামায়েত ইসলামী যে তাদের ‘চরিত্র পাল্টায়নি’, ভোররাতে পুলিশের উপর আক্রমণ করে আবারও তা প্রমাণ করেছে। সেই ২০১৩/১৪ সালে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, হেলমেট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছিল, তা আবার প্রমাণ করল।"বুধবার ঢাকায় যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার অনুমতি দেওয়া হবে না বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।