দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দলের ভেতরের অসন্তোষ বা অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে এখন থেকে এক নেতা একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জোরেসোরে তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচিতে এবিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে কেন্দ্র। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাধিক পদে যে সব নেতা রয়েছেন তাদেরকে স্বেচ্ছায় যে কোন একটি পদ ছাড়তে খুব শিগগিরই বলা হচ্ছে। দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে সব পদ থেকেই বাদ দেয়ার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় কমান্ড।
বিএনপিতে একাধিক পদে আছেন যারা
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহকর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ওয়াদুদ ভূঁইয়া, বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, কেন্দ্রের সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহ জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলসহ অনেকেই মহানগর ও জেলার শীর্ষ পদে এখনো আছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও বেশ কয়েকজন নেতা একাধিক পদে রয়েছেন। বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও এসব নেতারা একটি পদ রেখে অন্য পদগুলো ছাড়তে নারাজ।
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেকোন একটা পদ ছেড়ে দিবো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলে তা ইমপ্লিমেন্ট হয়নি। তবে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই হবে । আমরা কেউ দলের বাইরে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রের সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বলেন, “আমি দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুইটা পদে এক সাথে যদি কেউ দায়িত্বে থাকেন তাদের জন্যে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”
কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলার বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, “দল যদি মনে করেন একজন দুটি পদে থাকতে পারবেন তাহলে থাকবো। আর যদি মনে করেন আমাকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন তবে তাই হবে। সেক্ষেত্রে একটা পদ পছন্দ করে নেব।”
খসড়া তালিকাও অকার্যকর
দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাধিক পদে আছেন; এমন নেতাদের একটি খসড়া তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। একই সঙ্গে দুই পদে থাকা ৫৫ জন নেতার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। অনেক নেতা একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে সম্প্রতি আবার নরসিংদী জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানকে টাঙ্গাইল জেলার আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরীকে অ্যানীকে লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে লালমনিরহাট জেলার সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়া আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালামসহ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ৮ সদস্য একই সঙ্গে ২ পদে রয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, একটু দেরিতে হলেও এক নেতা এক পদ নীতি কার্যকর হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকে একটি পদ ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যরাও ছাড়বেন।
নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে দলীয় গঠনতন্ত্রের বিশেষ বিধান এক নেতার এক পদ যুক্ত করা হয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “ দলের ভালোর জন্য যোগ্যরা যথাযথ জায়গায় স্থান পাবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তাভাবনা দলকে এগিয়ে নেওয়ার। সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “একজন নেতা একাধিক পদ আঁকড়ে থাকায় যোগ্য নেতাদের পদ দেওয়া যাচ্ছে না। আর তাই ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকরে কাজ চলছে।”
অর্ধযুগ আগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি
৬ বছর আগেই তৃণমূলে ‘এক নেতা এক পদ’ বার্তা দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। স্বেচ্ছায় কেউ একাধিক পদ না ছাড়লে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাও করা হয় ওই সময়। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারার বিশেষ বিধান ‘এক নেতা এক পদ’ যুক্ত করা হয়। গঠনতন্ত্রের ১৫-এর ‘ক’ ও ‘খ’ উপধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে দলের কোনো পর্যায়ের কমিটির শীর্ষ দুই পদে থাকতে পারবেন না।
স্থায়ী কমিটি বা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের কোনো সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক অন্য কোনো পদে থাকতে পারবেন না। তবে অনিবার্য কারণে দলের চেয়ারম্যান সাময়িকভাবে ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন বলে গঠনতন্ত্রে বলা আছে।
নতুন নেতৃত্বকে জায়গা দিতে দীর্ঘদিন ধরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এ নীতি কার্যকরের চেষ্টা করছিল। এ লক্ষ্যে দলের নীতি-নির্ধারণী কমিটির বৈঠকেও গঠনতন্ত্রের এই ধারা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়, যা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। তবে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি কার্যকর করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড বর্তমানে উঠে পড়ে লেগেছে। খুব শিগগিরই এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে বলে বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে।