এপ্রিল ২০, ২০২১, ০৬:৫৬ পিএম
সম্প্রতি ভাসানচর নিয়ে প্রচার করা আল-জাজিরার সর্বশেষ প্রতিবেদন ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতি প্রতিহিংসার অংশ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বেসরকারি বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে প্রথম দিন থেকেই এটি করছে। তাদের উদ্দেশ্য মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। এটি যেকোনো মুসলিম সরকারের প্রতি আল-জাজিরার 'প্রতিহিংসাপরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গি', বিশেষত যেসব দেশ ভালো করছে তাদের বিরুদ্ধে।’
চলতি বছরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর সেখানে বেশ কিছু এনজিও সংস্থা মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের কারিগরিদলও গত সপ্তাহে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ভাসানচর নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছে। সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া ছিল সম্প্রতি ভাসানচর ঘুরে আসা পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদেরও।
কিন্তু এর মধ্যেই গতকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) ভাসানচর নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা নেটওয়ার্ক। আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে বিভিন্ন দাতা ও সাহায্য সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম সন্নিকটে, সেইসাথে ভাসানচরের একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী তীব্র ঝড়ের কবলে পড়ে আটকা পড়তে পারে এবং সেখানে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এবং তাদের মুখ ঢাকা ছিল। আর মিথ্যা খবর প্রচারই তাদের কাজ। সুতরাং, এ সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই।‘
গত মার্চে ১ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন সুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা নিতে জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভাসানচর পরিদর্শন করেন।
সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচর সরেজমিনে ঘুরে আসা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন বেশ ইতিবাচক।’
ড. মোমেন বলেন, ‘ভাসানচর আশপাশের দ্বীপগুলোর চেয়েও নিরাপদ। একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দ্বীপে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেটিকে আরো উন্নত ও উঁচু করার কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শিক্ষা প্রদানেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। তবে, সেটি মিয়ানমারের ভাষাতেই হওয়া উচিত। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, রোহিঙ্গারা দেশে ফিরলে সহজেই তাদের সমাজে মিশে যেতে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সহায়তা করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা কোথায় বাস করছেন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক ও মানবিক সংস্থাগুলোর মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়। ড. মোমেন বলেন, 'রোহিঙ্গারা কুতুপালং, কক্সবাজার, বরিশাল কিংবা ভাসানচরে বাস করছে কিনা তা বিষয় নয়। এটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়। তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের পরিষেবা প্রদান করা নিয়ে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন পরিষেবা প্রদানে তারা বাধ্য।'
তিনি বলেন, ‘যদি মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের পরিষেবা না দেয় তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তহবিল সরবরাহ করবে না। ফলে তারা তীব্র কষ্টের মুখে পড়বে। আর এর জন্য আন্তর্জাতিক দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোকে তাদেরকে জবাবদিহিতা করতে হবে।’