১২ মে প্রকাশ প্রকাশিত ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে সারাদেশের নয়টি বোর্ডে শুধুমাত্র গণিতে ফেল করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
তবে গণিত ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোতে ফেলের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অসুস্থতা কিংবা কোনো
অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে দুয়েকটি বিষয়ে অকৃতকার্য হতে পারেন একজন শিক্ষার্থী। আর এ যাবত কাল ধরে প্রচলিত এমন ঘটনায় ব্যহত হয় একজন শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন।
তবে আশার কথা হলো নতুন কারিকুলামে আসতে পারে বড় ধরণের পরিবর্তন। সামনে থেকে হয়তো মাধ্যমিক স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করলেও ভর্তি হওয়া যাবে একাদশ শ্রেণীতে।
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী কী কী পরিবর্তন সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
নেই কোনো নির্বাচনী পরীক্ষা
আগামীতে এসএসসি পরীক্ষায় থাকছে না কোনো টেস্ট বা নির্বাচনী পরীক্ষা। কোনো শিক্ষার্থী নবম থেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেই সুযোগ পাবেন মাধ্যমিক স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় বসবার।
উত্তীর্ণ না হলেও ভর্তি হওয়া যাবে একাদশ শ্রেণিতে
এনসিবিটির সুপারিশকৃত নতুন করিকুলাম অনুসারে সামনে থেকে এসএসসি পরীক্ষায় সর্ব্বোচ্চ দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও একজন শিক্ষার্থী শর্ত সাপেক্ষে ভর্তি হতে পারবেন একাদশ শ্রেণিতে। সেইসঙ্গে সেই শিক্ষার্থীকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার অকৃতকার্য বিষয়গুলোতে পাশ করতে হবে।
তবে তিন বা তার বেশি বিষয়ে ফেল করলে এই সুযোগ পাবেন না একজন শিক্ষার্থী।
মূল্যায়নের ৬৫% লিখিত, ৩৫% কার্যক্রম ভিত্তিক
আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা মূল্যায়নের কাঠামোতে আসছে বড় ধরণের পরিবর্তন। একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক শ্রেনির অর্জিত শিক্ষার মূল্যায়নের শতকরা ৬৫ ভাগ ধার্য করা হয়েছে লিখিত পরীক্ষার ওপর। আর বাদ বাকি ৩৫ শতাংশ যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
পরীক্ষায় বসতে থাকতে হবে নূন্যতম ৭০% উপস্থিতি
আগামীতে একজন শিক্ষার্থীকে এসএসসি পরীক্ষায় বসতে হলে, তাকে নূন্যতম ৭০ শতাংশ কার্যদিবস স্কুলে উপস্থিত থাকতে হবে। তাছাড়া ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন না, এমনটাই বলা হয়েছে নতুন কারিকুলামের সুপারিশে।
থাকছে না জিপিএ, আসছে ৭ ধাপের ফলাফল
আগের মতো এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে আর থাকছে না জিপিএ পদ্ধতি। তার পরিবর্তে যুক্ত হচ্ছে নতুন ধরনের সাত ধাপের ফলাফল কাঠামো। সেগুলো হচ্ছে ‘অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক।’
পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরে
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, বরাবরের মতো ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনের নিয়ম বদলে যাচ্ছে। তার বদলে আগামী ২০২৬ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বর মাসে। এই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে খাঁপ খাইয়ে নিতে প্রাথমিকভাবে সারাদেশ থেকে বিষয়ভিত্তিক ৬০০ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে ‘সাবজেক্ট পুল’ সৃষ্টি করা হবে।
পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা ব্যাপী
নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী আগামী ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা ব্যাপী এবং তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বিরতির সময়। তবে বর্তমানের মতোই পরীক্ষা কার্যক্রমটি শিক্ষার্থীদের নিজ স্কুল ব্যাতিরেক অন্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা হবে কেবল ১০ম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর
বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা নবম ও দশম এই দুই শ্রেণির পাঠ্যসূচিকে একত্রে সমন্বয় করে অনুষ্ঠিত হয়। তবেও সামনে বদলে যাচ্ছে এই নিয়ম। আগমী এসএসসি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হবে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর, এবং সেখানে থাকছে নবম শ্রেণির কোনো বিষয় বস্তু।
পরীক্ষা হবে ১০ টি বিষয়ের ওপর
আগামীতে এসএসসি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের দশটি বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে। বিষয়গুলো হলো যথাক্রমে: বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মীয় অধ্যয়ন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্র বলছে, তাঁরা আশা করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় মূল্যায়নের বিষয়টি তাড়াতাড়ি অনুমোদন হবে।