মার্চ ৩, ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। রবিবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সিন্ডিকেট সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২২ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আনা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ‘ফলাফলের ধ্বস’ নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। এছাড়াও এর অন্য দুজন সদস্য হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমদ, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। এই কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী এবং রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর নারী শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ বা তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান। অন্য দুজন সদস্য হলেন সিন্ডিকেট সদস্য ও হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান ও সহকারি প্রক্টর সঞ্চিতা গুহ। এই কমিটিকে দুই সপ্তাহের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পরবর্তীতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলে পাঠানো হবে ।
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে ফলাফলে ধ্বস নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে মৌখিক পুনঃগ্রহণ ও সম্পূর্ণ ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন এবং অধ্যাপক নাদির জুনাইদের কৃতকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করারর দাবি জানায়। একই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ১০ ফেব্রুয়ারি বিভাগের এক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ড. নাদিরের বিরুদ্ধে মৌখিক যৌন হয়রানী ধামাচাপা দেওয়ার অন্য আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বিভাগটির আরেক নারী শিক্ষার্থী। উক্ত যৌন নিপিড়নের অভিযোগের প্রতিবাদে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল শ্রেণি কার্যক্রম বর্জন করে ক্যাম্পাসে অভিযুক্ত নাদির জুনাইদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। পরবর্তিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটির চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উক্ত চিঠিতে বলা হয়, অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের কারণে তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না এমন লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস চাইলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে এমন একটি বিবৃতি প্রদান করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন এবং ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে আবারও ক্লাস বর্জন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সর্বশেষ, গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে আরেকটি যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।