ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর সব ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (২৪ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী।
তদন্ত করতে উপাচার্যের নির্দেশ
প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে আমাদের শিক্ষার্থী হাফিজের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে দুপুরে বিষয়টি (হাফিজের মৃত্যুর ঘটনা) সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে নির্দেশ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
নিখোঁজের নয় দিন পর মর্গে লাশ
নিখোঁজের ৯ দিন পর রবিবার (২৩ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে মেলে হাফিজের লাশ। তাকে চিহ্নিত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গত ১৫ মে ঈদুল ফিতরের পরদিন দুপরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন হাফিজুর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন তিনি। রাত ৮টার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। হাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায়। হফিজ নিখোঁজের ঘটনায় তার মা সামছুন নাহার কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর ১২৮৩।
ছাত্র সংগঠনগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো। সোমবার (২৪ মে) পৃথক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এদিন এক মানববন্ধনে একই দাবি জানায় ঢাবি ছাত্রলীগ।
বিবৃতিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাবি শাখার নেতারা বলেন, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই রকম একটা ঘটনা ঘটেছে অথচ প্রক্টর-ভিসি কিছুই জানেন না, এরকম হতে পারে না। আবার পুলিশ এ ঘটনা জানলেও এবং প্রথম থেকে এ ঘটনার সঙ্গে থাকলেও (দুজন কনস্টেবল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়) কেন তৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি এবং এটা ‘আত্মহত্যা’ কি না তারও কোনো তদন্ত না করে লাশ মর্গে পাঠিয়ে দিল এবং সেখানে এক সপ্তাহ ধরে পঁচলো।
তারা বলেন, ক্যাম্পাসে প্রচুর সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেনি। এটা শুধু দায়িত্বহীনতা নয় বরং পুলিশ ও প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ড ছাত্রদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করছে। তাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার দরকার। এ সময় নেতারা অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, আমরা মনে করি এই মৃত্যুতে উসকানি এবং প্রভাব উপস্থিত আছে। অবিলম্বে হাফিজুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ পড়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না। তাই এই মৃত্যুতে প্রশাসনের দায়ও কম নয়। হাফিজের এমন অস্বাভাবিক ও নির্মম মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে সকালে এক মানববন্ধনে হাফিজ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এটি আত্মহত্যা বললেও আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা যারা জড়িত থাকতে পারে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যদি গাফিলতি থাকে তারও তদন্ত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছে।