অগ্নিকাণ্ডে আবুধাবিতে প্রাণ হারালেন তিন বাংলাদেশি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৩১, ২০২৩, ০৯:৪৪ পিএম

অগ্নিকাণ্ডে আবুধাবিতে প্রাণ হারালেন তিন বাংলাদেশি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের তিনজনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নে। 

মঙ্গলবার (৩০ মে) স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে আবুধাবির শারজাহ শহরে একটি আসবাবপত্র কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

মৃত তিন প্রবাসী হলেন- সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের মতইন গ্রামের মো. রাসেল (২৬), পলতি তারাবাড়িয়া গ্রামের তারেক হোসেন ওরফে বাদল (৪২) ও মো. ইউসুফ (৪৫)।

ডুমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন কানন বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঢাকায় থাকার কারণে নিহতদের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হবে।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে অসহায় হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনরা। একই গ্রামের তিন ব্যক্তির অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীও।

নিহত রাসেলের মা শরীফা বেগমের ভাষ্যে জানা যায়, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় রাসেল ঢাকায় একটি ব্যাগ কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ দেড় বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে তাঁর। জীবিকার তাগিদে ও পরিবারের খরচ চালাতে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০২২ সালে আবুধাবিতে যান রাসেল। একই এলাকার কয়েকজনের সাথে একটি সোফা কারখানায় চাকরি করতেন তিনি।

রাসেলের মা আরও জানান, সোমবার রাতে ১টার দিকে পরিবারের সাথে কথা হয় রাসেলের। মঙ্গলবার দুপুরে খবর পান রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে রাসেল মারা গেছে।

ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন তা পরিশোধ কীভাবে করবেন আর সংসার কীভাবে চলবে এ নিয়ে ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শরীফা বেগম।

নিহত ইউসুফ মিয়ার বড় ছেলে মহিনুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে আবুধাবি যান তাঁর বাবা ইউসুফ মিয়া। এরপর থেকে সোফা কারখানাটিতে চাকরি করতেন তিনি। সবশেষ গত ৫ বছর আগে দেশে আসার পর ছুটি শেষে পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে যান।

তিনি বলেন, এক বছর আগে মালিকের কাছ থেকে কারখানাটি কিনে নেন তাঁর বাবা। তারপর বাংলাদেশি শ্রমিক দিয়ে সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন। দীর্ঘ সময় কষ্ট করে একার আয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন তিনি। 

এদিকে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে তারেক হোসেন বাদলকে হারিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন বাবা মীর হোসেন। চার ছেলের মধ্যে দুইজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে চলে গেলেন বাদল।

মীর হোসেন বলেন, কয়েক বছর ওমান থাকার পর ভিসায় সমস্যা হওয়ার কারণে গত বছর দেশে ফিরে আসেন বাদল। একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজনসহ তার তিন ছেলে রয়েছে। ৮ মাস আগে এক আত্মীয়র সহযোগিতায় আবুধাবিতে গিয়ে এলাকার ইউসুফের সোফা কারখানায় চাকরি নেন বাদল। দুই ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় পুরো সংসার চালানোর দায়িত্ব ছিল বাদলের কাঁধে।

আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়ায় শরীরের যেটুকু অংশ রয়েছে সেটুকু যেন বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় এমনটাই দাবি করছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।

Link copied!