জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম
জ্বালানি সরবরাহ ঘাটতি আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গ্লোবাল রিস্কস পারসেপশন সার্ভে ২০২৪` শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় ঝুঁকি মুদ্রাস্ফীতি এবং তৃতীয় অর্থনৈতিক মন্দা। সম্পদ ও আয়ের বৈষম্য এবং সরকারি ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ ঝুঁকির স্থান বলে চিহ্নিত করা হয়েছে জড়িপ নির্ভর প্রতিবেদনটিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোভিড-১৯ সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধের কারনে এসব ঝুঁকি প্রকট হয়েছে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিশেষত বাংলাদেশের জন্য শীর্ষ পাঁচটি ঝুঁকি হল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সরবরাহের ঘাটতি, মন্দা, আয়ের অসমতা, উদ্বেগজনক বেকারত্বের হার এবং ঋণ।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া দারিদ্র্যের হার কমিয়ে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হবে।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে ১০টি ঝুঁকির মধ্যে পাঁচটি পরিবেশগত:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ব অর্থনীতিকে পরবর্তী দশকে ১০টি প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং সেই ঝুঁকিগুলোর মধ্যে পাঁচটি পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত।
তবে আরও দুটি হুমকিও পরিবেশগত সমস্যাকেই চিহ্নিত করে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ঝুঁকি- ধরিত্রীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি-বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রধান ঝুঁকি। ভুল তথ্য এবং বৈষম্য পঞ্চম ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরিবেশের জন্য আরেকটি ঝুঁকি হল দূষণ। সূচকে এর অবস্থান দশম।
অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক প্রভাব ষষ্ঠ স্থানে এবং জোরপূর্বক অভিবাসন সপ্তম স্থানে রয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক মেরুকরণ যথাক্রমে অষ্টম এবং নবম শীর্ষ ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এম জাকির হোসেন বলেন, ‘ছড়িপে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছে ঝুঁকিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকার ব্যাপারে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।"
বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৪৯০ জন আর্থিক খাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির শীর্ষ ২০টি ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। গ্লোবাল ইকোনমিক ফোরাম প্রতি বছর এই সমীক্ষা চালায়।
আগামী ২ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিসমুহ:
পরবর্তী দুই বছরের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী বৈশ্বিক হুমকি সূচকও এই জরিপ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ভুল তথ্য প্রচার সূচকের শীর্ষে স্থান পেয়েছে।
২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বছর হিসাবে সামনে এসেছে। এবছর ৬০ দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা যেখানে প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ ভোট দেবেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর রবিবার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের বক্তব্যে ভুল তথ্যের বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘ভুল তথ্য প্রচার কীভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা যায় সেই বিষয়ে নতুন একটি কাঠামো নিয়ে কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আমাদের নতুন কৌশল প্রয়োজন।’
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং সামাজিক মেরুকরণ যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নেতারা সাইবার নিরাপত্তাহীনতাকে তৃতীয় এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাতকে পঞ্চম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগের অভাব, মুদ্রাস্ফীতি, অভিবাসন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দূষণজনিত কারনে সৃষ্ট ঝুঁকি যথাক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম অবস্থানে রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ জনিত সংকট সারা বিশ্বের মানুষকে হুমকির মুখে ফেলেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উত্তেজনা বেড়ে আরও বড় সংঘাতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা অন্যান্ন সীমান্ত গুলোতে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।