বৈশ্বিক উষ্ণতা সহনীয় পর্যায়ে রাখার কৌশল নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে ২৮ তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ।
জাতিসংঘের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে। ৭ ডিসেম্বর ব্যতীত ১২ তারিখ পর্যন্ত টানা এ সম্মেলন চলবে।
এবারের সম্মেলনে প্রতিটি দেশের আমলনামা প্রকাশ করা হবে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কোন দেশের কী করার কথা ছিল আর কতটুকু করেছে তা থাকবে এতে। একে বলা হচ্ছে গ্লোবাল স্টকটেক স্কোরকার্ড।
এটি করা হচ্ছে যাতে এর উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রগুলো ২০২৫ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় নতুন এ্যাকশন প্ল্যান প্রণোয়ন করতে পারে।
আয়োজক দেশ আবর আমিরাত আশা করছে এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ টি দেশ থেকে ৭০ হাজারের মতো প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবেন বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা, সরকারি কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতা, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, নতুন, আদিবাসী ও এনজিও প্রতিনিধিরা। এছাড়া থাকবেন বিভিন্ন জলবায়ু তহবিল, বিশ্বব্যাংকসহ বহুজাতিক ব্যংকগুলোর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক হবে গতবছর সম্মেলনে সকলের সম্মতিক্রমে গঠিত লস এন্ড ডেমেজ ফান্ড পরিচালনা কাঠামো ও এতে অর্থায়নের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নির্ধারণ করা।
এ তহবিল গঠন করা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে ক্ষয়ক্ষতি তার জন্য তাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করা। তবে উন্নত বিশ্ব যাদের কার্বন নিঃসরনের ফলে এ ক্ষয়ক্ষতি তারা একে ক্ষতিপূরণ বলতে রাজি নয়।
বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’র প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন “প্যারিস চুক্তির সিদ্ধান্ত সমূহের ৫১ ধারায় বলা হয়েছে জলবায়ু অর্থায়নকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেখা যাবে না। ফলে ক্ষয়ক্ষতির জন্য বৈশ্বিক চাপের মূখে উন্নত দেশগুলো এ তহবিল গঠনে রাজি হলেও একে ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত ফান্ড বলা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “এখানে অর্থায়ন করবে কারা, কে এর সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। এগুলো খুব বড় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে, যার প্রতিফলন দেখা যাবে এবারের সম্মেলনে।”
এদিকে অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা বিবেচনায় জাতিসংঘের সর্ববৃহৎ এ সম্মেলনটির প্রতিটি সিদ্ধান্ত হয় সর্ববসম্মতভাবে। কোন একটি রাষ্ট্রও যদি কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তবে সে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা যাবে না। কার্যপ্রণালী বিধি না থাকার কারনে এখানে কোন বিষেয়েই ভোটাভোটি হয়না। ফলে অনেক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “কার্যপ্রণালী বিধি প্রথম সম্মেলনেই হওয়ার কথা ছিল। অথচ এ পর্যন্ত ২৭টি সম্মেলন হয়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্যপ্রণালী বিধির বিষয়টি তুলে ধরা হবে।”
আয়োজক দেশ আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা পুরো সম্মেলনস্থলজুড়ে দেখানোর চেষ্টা করবে প্রাক-শিল্পায়নের সময় থেকে ২,১০০ সাল পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে কীভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রেখে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।
বিশেষত তারা কম দামে মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ করবে সম্মেলনস্থলজুড়ে, যেখানে কার্বন নিঃসরণ এভাবে হবে যাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি অতিক্রম না করে।
সম্মেলনের মূল লক্ষ্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টিই এবার গুরুত্ব পাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল সম্বৃদ্ধ একটি দেশ এবারের সম্মেলনের সভাপতি যেখানে সম্মেলনের মূল স্পৃহাটাই জ্বালানী তেল বিরোধী। তাই আয়োজক দেশের আন্তরিকতার প্রতি নজর থাকবে সবার। এছাড়া কীভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানীতে রূপান্তর করা যায় তার রূপরেখা থাকবে আলোচনায়।
এবারই প্রথম কোন তেলসম্বৃদ্ধ দেশে জলবায়ু সম্মেলন হতে যাচ্ছে। বৃটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ১৪০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহনের কথা রয়েছে এ সম্মেলনে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবার অংশ নিচ্ছেন না। আর মাত্রই অসুস্থতা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পোপ ফ্রান্সিস তার অংশগ্রহন বাতিল করেছেন বলে আয়োজক দেশ থেকে জানানো হয়েছে।