বিশ্ব পরিবেশ দিবস

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পুলিশ ইউনিটের পরিকল্পনা

আহম্মেদ মুন্নী

জুন ৫, ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম

পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পুলিশ ইউনিটের পরিকল্পনা

পরিবেশ দূষণ ধীরে ধীরে আরও বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। তবে পরিবেশ দূষণ রোধে আইন থাকলেও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন পরিবেশবিদরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকদফা পরিবেশ পুলিশ ইউনিট গঠন করার কথা হলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে পরিবেশ পুলিশের মতো একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।

পরিবেশ দূষণে বাড়ছে অকাল মৃত্যু

বায়ু, পানিসহ বিভিন্ন ধরনের দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জন নিরপরাধ মানুষ অকালে মারা গিয়েছেন, এই তথ্য উঠে এসেছে ল্যানসেট ‘কমিশন অন পলিউশন অ্যান্ড হেলথ’ রিপোর্টে। এদিকে চলতি বছরে ২৮ মার্চ বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে মোট অকালমৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশই বায়ু দূষণের কারণে হয় বলে জানানো হয়েছে। পরিবেশগত কারণে পরোক্ষমৃত্যুর ফলে আইনগত দিকটি বেশ উপেক্ষিত।

ক্যাপসের পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিআরটিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আইনে বলা আছে শব্দদূষণরোধে পুলিশ যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে একথা আবার পুলিশের আইনে উল্লেখ নেই। পরিবেশের সার্বজনীন বিষয় নিয়ে কাজ করতে নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশের মতো পরিবেশ পুলিশ একান্তভাবে প্রয়োজন মনে করেন তিনি। তাহলে পরিবেশ পুলিশ দ্বারা পরিবেশের যে আইনগুলো আছে তার সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হবে। যারা আইন মানবে না তাদের আইনের আওতায় এনে আনতে হবে। পরিবেশ পুলিশ ইউনিটের পাশাপাশি বিসিএসে এনভারমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা পর্যায়ে যদি পরিবেশ ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া যায় তাহলেও পরিবেশ রক্ষায় বড়ও একটি ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে।

পরিবেশ পুলিশ নিয়ে চলছে আলোচনা

পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন অভিযান চললেও সফলতার মুখ দেখেনি কোনোটাই । এজন্য ২০১৯ সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি পরিবেশ পুলিশ নামে বিশেষ এক পুলিশ বাহিনীর কথা জানিয়েছিলেন । সেসময় তিনি পরিবেশ পুলিশ কেন দরকার তার ব্যাখায় বলেন, যদিও পরিবেশ অধিদপ্তর সরকারের আলাদা একটি সংস্থা। তাদের নিজস্ব গতিতে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পরিবেশ যেখানে বিঘ্নিত হয় সেখানে তারা আইন প্রয়োগ করে থাকেন। সত্যিকার অর্থে যদি পরিবেশ রক্ষা করতে হয়, তাহলে পরিবেশ পুলিশের প্রয়োজন আছে।

বিশেষ করে কৃষিজমিতে কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমে যাচ্ছে দেশের প্রতিটি নদী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ আশপাশের নদীগুলোর পানিকে আর পানি বলা যায় না। বুড়িগঙ্গার পানির রঙ ও দুর্গন্ধের কারণে নদীর কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। ইটভাটার ধোঁয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এসব সমস্যা সমাধানে পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত জনবল আছে কিনা সেটা আমার জানা নাই। তবে এসব সমস্যা দেখভাল করার জন্য যদি ‘পরিবেশ পুলিশ’ থাকত, তাহলে আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতাম।

পরিবেশ পুলিশ প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া মো: মনজুর রহমান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন ,বর্তমান যে পরিস্থিতি অবশ্যই পরিবেশ পুলিশের দরকার রয়েছে। অন্য সব পুলিশের ইউনিট যেমন শিল্প পুলিশ, নৌ, হাইওয়ে, রেলওয়ে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, ট্যুরিস্ট, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন) মত পরিবেশ পুলিশের একটি প্রস্তাবনা রয়েছে।এ বিষয়ে আলোচনা চলছে ,এই ইউনিট কি কি কাজ করবে, কতজন সদস্য থাকবে সব কিছু নিয়েই আমাদের মাথায় প্লান রয়েছে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি তবে এখন প্রযন্ত কোনো কার্যক্রম নেই।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আ ন ম মাছুম বিল্লাহ বলেন, সাধারণ পুলিশ স্টেশনে জেনারেল ডায়েরি বা এজাহার দাখিলের মতো পরিবেশ সুরক্ষা পুলিশও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকবে। অভিযোগ দাখিলের ১ ঘণ্টার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন, পরিবহন ইত্যাদি বন্ধের জন্য বাজার মনিটরিং করা। সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নদী, নালা, জলাশয় দূষণ নিয়ন্ত্রণে অভিযোগ পাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে ওই স্থানে গিয়ে দূষণকারীদের আটক করা এবং বনভূমি, উদ্যান, পার্ক, মাঠসহ গণপরিসরের গাছ এবং বৃক্ষ নিধন ও সাবাড়কারী, দখল ও দূষণকারীকে আইনের আওতায় আনাও তাদের কাজ থাকবে।

Link copied!