প্রতি বছর পুরো বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে মশার কামড়ে। আর প্রায় ৭০ কোটিও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন মশাবাহিত রোগে। জিকা ভাইরাস, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, কিংবা ডেঙ্গু জ্বরের মতো অসংখ্য প্রাণঘাতী রোগের জীবাণু বহন করে মশা।
আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন সে সময়ও হয়তো আপনারই আশেপাশে ঘুরছে মশা। এই ভয়াবহ উৎপাতের মধ্যে যদি জানেন পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে নেই কোনো মশা, তাহলে কেমন লাগবে? সেখানে চলে যাওয়া ইচ্ছে কি জাগবে না?
তাহলে জেনে নিন, মশার উৎপাতহীন আস্ত একটি দেশই আছে পৃথিবীতে। সেই দেশটি হলো আইসল্যান্ড।
প্রায় ১ হাজার ৩০০ ধরনের প্রাণী থাকলেও মশা এমনকি মশার লার্ভাও দেখা যায় না দেশটিতে। সর্বশেষ মশা পাওয়া গিয়েছিল প্রায় চল্লিশ বছর আগে। তাও মাত্র একটি। সেই মশাটি সংরক্ষিত আছে দেশটির ইন্সটিটিউট অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে।
১৯৮৬ সালে আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক জিলাসন একটি বিমানে মশাটি খুঁজে পান। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, এটিই আইসল্যান্ডে পাওয়া একমাত্র মশা। এরপর আর কোনো মশা পাওয়া যায়নি।
আইসল্যান্ডের প্রতিবেশী গ্রিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ডেনমার্কে মশার উপদ্রব দেখা গেলেও কীভাবে এই দেশটি বেঁচে গেল সেটিই এবার জেনে নেয়া যাক-
মশার বংশবিস্তারের জন্য উষ্ণতার দরকার। যেসব অঞ্চলের আবহাওয়ায় উষ্ণতা বেশি, সেসব অঞ্চলে মশাদের উৎপাতও বেশি। শীতল আবহাওয়ার দেশ আইসল্যান্ডে তিনবার ভয়াবহ শীত নামে। এই তীব্র শীতে মশা বংশবিস্তার করতে পারে না।
এছাড়াও মশার বংশবিস্তারের জন্য যেমন জলাশয়ের প্রয়োজন হয় তেমনটা আইসল্যান্ডে দেখা যায় না। মশার ডিম থেকে লার্ভা, লার্ভা থেকে মূককীট, মূককীট থেকে পরিণত বাচ্চা– এই চক্রের জন্য সময় ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পাশাপাশি প্রয়োজন বদ্ধ জলাশয়। যা এই ভয়াবহ শীতের দেশটিতে পাওয়া সম্ভব নয়।
দেশটির তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছিতে নেমে যায়। জলাশয়ের পানি বরফে পরিণত হয়। যে কারণে দেশটিতে মশার বংশবিস্তার অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
মশাবাহিত রোগে যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অবস্থা ভয়াবহ সেখানে মশাবিহীন দেশ আইসল্যান্ডে থিতু হওয়ার ইচ্ছে যদি আপনার মনে জাগ্রত হয় তবে জানিয়ে দেই একটি দুঃখের সংবাদও।
আইসল্যান্ডের এই সুখের দিন হয়তো আর বেশিদিন থাকবে না। যে আবহাওয়া আইসল্যান্ডকে মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখছে তার পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত ২০ বছরে প্রায় ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়েছে আইসল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা। আর নতুন করে প্রায় ২০০ প্রজাতির নতুন কীটপতঙ্গ আবাস গেড়েছে দেশটিতে। এজন্যই দেশটির বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বন্ধ না করা গেলে অচিরেই আইসল্যান্ডে বসতি গড়বে মশারা।