কয়েক স্তরের পোশাক পরে শীতের সাথে লড়াইটা মানুষ বেশ ভালোভাবেই চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আপনার ঘরে আদরে বেড়ে ওঠা পশুপাখিগুলোর কি সে সুযোগ আছে! চলতি সময়ের তীব্র শীত গৃহপালিত পশুপাখির জন্য হতে পারে বিপদজ্জনক। শীতকালে নিজের পাশাপাশি পোষা প্রাণীটির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
চলুন জেনে নেই, কীভাবে শীতকালীন অসুস্থতা থেকে পোষা প্রাণীদের রোগমুক্ত রাখবেন।
পোষা প্রাণীকে ঘরের ভেতরে রাখা
ঠান্ডা থেকে পোষা প্রাণীদের নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো দিনের বেশির ভাগ সময় এবং সারারাত ঘরের ভেতরে রাখা।
তাই পোষা পশুপাখিদের রাতের পুরোটা সময় ঘরের ভেতরে রাখা উচিত। তবে দিনের কিছুটা সময় সঙ্গে নিয়ে বের হওয়া যেতে পারে শারীরিক অনুশীলনের জন্য।
দিনের বেলা সূর্যের সরাসরি তাপ প্রবাহের ফলে শীত অনেকটা কম থাকে। সকালের রোদে যেতে পারলে তাদের শরীর ভিটামিন ডি পাবে। শীতের সময় দৌড়ঝাপ, খেলাধুলা, বা কিছু সময় হেঁটে বেড়ানো এদের শরীর গরম রাখতে পারে।
পোষা প্রাণীর সহনীয় তাপমাত্রা
সাধারণত পোষা প্রাণীর শরীরে লোম হওয়ায় , তাদের তাপ সহন ক্ষমতাও বেশি হয়। তাছাড়া তাদের শরীরের চর্বিও তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ঘরে উপযুক্ত উষ্ণতা না পেলে পোষা প্রাণীরা স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ভেতর থাকতে চাইবে না। তবে তীব্র শীতে মোটা কাপড় দিয়ে তাদের শরীর ঢেকে রাখুন। তাছাড়া বাড়ির ঠান্ডা মেঝে থেকে পোষা প্রাণীদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য গরম মাদুর বিছিয়ে দেওয়া ভালো। ছোট গরম বিছানা ও পশুদের জন্য নির্ধারিত কম্বল দিয়ে ঘুমানোর জায়গাটি পরিপাটি করে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে তারা একটু গরম এবং আরামপ্রদ জায়গায় ঘুমাতে পারবে।
পোষা প্রাণীর শীতের পরিধেয়
পশুপাখিদের অধিকাংশেরই প্রকৃতি প্রদত্ত লোমের আবৃত থাকে। তাই অনেকেই মনে করে তাদের ঠান্ডাতে কোনো সমস্যাই হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা, পাতলা লোমযুক্ত পূর্ণ বয়স্ক পশু এমনকি অধিক লোমশ পশুগুলোর মধ্যে যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা সঠিক সুরক্ষা ছাড়া বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে হাইপোথার্মিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে।এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলো শরীরের বেশিরভাগ অংশকে ঢেকে রাখা সুন্দর একটি সোয়েটার দিতে পারে।
ঠান্ডা থেকে পা বাঁচাতে এক জোড়া বুটি হতে পারে দারুণ একটি উপায়। বুটিগুলো পশুর থাবাগুলো উষ্ণ রাখার সঙ্গে সঙ্গে ময়লা জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে।
হাইপোথার্মিয়ার বিষয়ে সর্তক থাকা
হাইপোথার্মিয়া হলো শীতে পোষা প্রাণীদের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ঘন ঘন তন্দ্রা, কাঁপুনি, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ফ্যাকাশে মাড়ি, চোখের মণির কালো অংশ বড় হয়ে যাওয়া, এবং চেতনা হ্রাস পাওয়া।
এই লক্ষণগুলোর যে কোনোটি দেখা দিলে
তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত পোষ্যটিকে একটি উষ্ণ জায়গায় রাখা যেতে পারে এবং নিকটস্থ পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মত যত্ন করা উচিত।
পোষা প্রাণীর খাবার
ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ সঠিক খাবার প্রাণীদের পশমের সঠিক বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সুষম খাবার যোগান দেওয়ার পাশাপাশি খাবারের তাপমাত্রা ধরে রাখতে কিছু গরম পানি মেশানো যেতে পারে। এছাড়া প্রাণীদের জন্য পানি শূন্যতা অনেক বেশি ক্ষতি করে। জীবন নাশের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে এর ফলে। তাই শীতে আপনার পোষা প্রাণীকে সুস্থ রাখতে সুষম খাবার এবং অধিক পরিমাণে পানি পান নিশ্চিত করুন।
শীতে পোষা প্রাণীর ত্বকের যত্ন
ঠান্ডার তীব্রতা থেকে পোষা প্রাণীদের ত্বক বাঁচানো খুব জরুরি। এসময় ঘন ঘন গোসল করানো যাবে না। খাদ্যে নারিকেল তেল ব্যবহার করলে তাদের শরীরে আদ্রতা প্রদান করবে। শুধুমাত্র পোষ্য পশু-পাখিদের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া ও তদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কিছু নিরাময় মলম আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। নাক ও পায়ের আঙুলের আশেপাশে লাল দাগযুক্ত জায়গাতে এগুলো প্রয়োগ করতে হয়।
শীতকালে পোষা পশুপাখিদের নিয়মিত যত্নের পাশাপাশি সেরা সংযোজন হতে পারে বাড়িতে সর্বদা এদের জন্য নির্ধারিত একটি প্রাথমিক চিকিৎসার কিট রাখা। আর ঠান্ডার এই সময়টাতে আপনার আদরের পোষ্যটির যেকোনো জরুরি অবস্থায় সঠিক থেরাপি বা ওষুধের জন্য একজন অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে।